সমতা রয়েছে

মানুষের মধ্যে না থাকলে মানুষের মধ্যে কোন কিছু থাকবে না।

বৃদ্ধা ভদ্রমহিলার চোখের জল মুছিয়ে দিলো মণি। তারপর ধীরেধীরে অস্ফুট কণ্ঠে বললো, "চলুন মা, আপনার থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিই।" বৃদ্ধা ভদ্রমহিলার যৌবনে ভারী শখ ছিলো তার যেন একটি মেয়ে হয়। ঈশ্বর তার সেই মনোবাঞ্ছা পূরণ করেননি। আর যাকে পেয়েছিলেন দ্বিতীয় সন্তান রূপে তাকে তো অদৃষ্টদোষে ধরে রাখতে পারেননি। বৃদ্ধার শীর্ণ গাল বেয়ে অশ্রুধারা নামলো কোটরাগত দুই চোখের কোল থেকে, মণির মুখে "মা" ডাক শুনে।

 

 

 

 

 

বৃদ্ধাকে নিয়ে মণি একটি গেস্ট হাউসে এসেছে। এখন আপাতত বৃদ্ধাকে কিছুদিন এখানেই রাখবে, পরবর্তী সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত। মণিরও গলার কাছটায় ব্যথা করছে। ভারী অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিলো না। মণির আকন্ঠ অভিমানের বরফ শীতল পাহাড় কি তবে গলে জল হয়ে গেলো? মণি তাড়াতাড়ি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় বৃদ্ধা পিছন থেকে ডাক দিলো, "তুমি কোথায় থাকবে মা? এখানেই থাকো না আমার সাথে।" মণি পিছনে মুখ না ফিরিয়েই, "একটু জরুরি কাজ আছে," বলে বেরিয়ে গেলো। অথচ একদিন মণি প্রত্যেক মুহূর্তে অপেক্ষা করেছে তাকে কেউ "মা" বলে ডাকুক, দু'টো স্নেহমাখা কথা বলুক। কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলুক, "কোনো চিন্তা নেই, আমি আছি তো!" নাহ্, সেসব যখন হয়নি, তখন আর মণি নতুন কোনো বন্ধনে জড়াতে চায় না। নিজের কাজ আর সেই মানুষগুলোকে নিয়েই জীবনে এগিয়ে চলতে চায়, যারা তাকে একদিন আপনার করে কাছে টেনে নিয়েছিলো। বাইরে বেরিয়ে মণি ক্যাব ধরলো। ক্যাবের পেছনের সিটে হেলান দিয়ে মণি চোখ বুঝলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। আজ মণি বনগাঁ গিয়েছিলো। খুব ক্লান্ত মণি। তবে মণির মন পিছিয়ে গেছে অনেকবছর পিছনে।

 

 

 

 

 

ছোটবেলায় মা কত যত্ন করে জামাপ্যান্ট পরিয়ে, দুধ খাইয়ে খেলতে পাঠাতো। বনগাঁর বাড়ী থেকে ইস্কুলে পাঠাতো। বরাবরই লেখাপড়ায় ভালো মণি। খুব ভালো রেজাল্ট করতো মণি। তুলনায় দাদার সাদামাটা রেজাল্ট, রুক্ষ ব্যবহার। রোজই নালিশ ইস্কুল থেকে। মা তিতিবিরক্ত, বাবা পরোক্ষভাবে মাকেই দোষারোপ করে, "ব্যবসা সামলাবো, নাকি বাড়ীতে বসে ছেলেদের দেখভাল করবো? আর তোমাকেও বলি দুই ছেলের দিকে একটু সমান নজর দাও।" কিন্তু মণি জানতো মা দাদাকেই বেশী দেয় সবকিছু, সে মাছের টুকরোটা হোক, মিষ্টির ভাগটা হোক। দাদাকে কম দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই নেই। এমনকি সমান সমান দিলেও ভারী আপত্তি দাদার। চিৎকার চেঁচামেচি করে মাকে কটু কথা বলা। মা নাকি মণিকেই বেশী ভালোবাসে এমন অভিযোগের রাশি। মা বোঝাতে পারতো না দাদাকে। মা তো আসলে মণিকে একটু বেশীই আগলে রাখতো। আর এর বাড়তি কিছুই নয়। তবুও দাদা বুঝতে চাইতো না। ভীষণ এক হিংসা আর আক্রোশে অকারণেই মণিকে মারতো। মণি কষ্ট পেলেও কখনো দাদার নামে নালিশ করেনি। আসলে মণি যে জন্মগত স্বভাব অনুযায়ী বড়ো নরম প্রকৃতির ছিলো।


Tanvir Tanvir Farhan

86 Blog postovi

Komentari