#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ০৮
আবিরা বায়না ধরেছে ভাইয়ের বউ আনতে সেও যাবে।
একমাত্র মেয়ের ইচ্ছে বলে কথা তাই আর নীলিমা হক না করলেন না।
আবইয়াজ আবিরা পাশাপাশি হাটছে।
আবইয়াজ একটু কেশে বললো কুত্তার মা।
-এই একদম কুত্তার মা বলবেন না ওর নাম পিকু।
-সরি সরি আমার ভুল হয়ে গেছে, গার্লফ্রেন্ড কুত্তাপ্রেমি মানেই কুত্তাকে আর কুত্তা বলা যাবে না আজ থেকে মানুষ বলে সম্বোধন করবো।
-ইশ কি আমার আসছেন, নিজেকে কি মনে করেন'টা কি আপনি হুম?
আবইয়াজ এক বাক্যে উত্তর দিলো।
-তোমার জামাই।
-আল্লাহর দুনিয়ায় এতো মানুষ থাকতে আপনি আমার পেছনে পড়ে আছেন কেনো?
-জীবন এমনিতেই বরবাদ হয়ে গেছে, তোমাকে বিয়ে করে একেবারে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে চাই।
আবইয়াজের কথায় ফিক করে হেসে উঠলো আবিরা।
আদি ডেকে উঠলো, এই আবিরা এইটুকু রাস্তা আসতে কি এতো সময় লাগে? তাড়াতাড়ি আয়।
শালা মাদ্রিদ তুই যা না, তোর বোনকে প্রটেক্ট করার জন্য তো আমি আছি। বিড়বিড় করে বলে উঠলো আবইয়াজ।
আবইয়াজের ভাইব্রেশন করা ফোন বার বার কেঁপে উঠলো।
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো রিফাত কল করছে।
-এই আরেক মাদ্রিদ এখন আবার ফোন দিচ্ছে, এরা কি শান্তিতে প্রেম'টাও করতে দিবে না আমায়?
বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোন কানে তুললো আবইয়াজ।
অপর পাশ থেকে রিফাত বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো, "মেঘাকে কি বলেছিস তুই?"
-আমি আবার কি বলবো?
-ভাই মেঘা সুইসাইড করছে।
-এ এই কি বলিস তুই?
তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয় বলেই কল কেটে দিলো রিফাত।
-আবইয়াজ কাউকে কিছু না বলে বাইকে নিয়ে দ্রুত রওয়ানা দিলো।
-এবার কি তবে আমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলছি।
নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে।
গার্লফ্রেন্ড না হলেও দুজনে যে খুব ভালো বন্ধু এটা অস্বীকার করা যায় না।
কুড়ি মিনিটের মধ্যে হসপিটালে পৌছালো আবইয়াজ, মেঘাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বাইরে বসে আছেন মেঘার মা, রিফাত ও মিষ্টি, মেঘার বাবা ব্যাবসার কাজে বাইরে থাকেন।
রিফাতের কথায় যতটুকু বুঝতে পারলো মেঘা হাতের অনেকাংশেই খুব গাঢ় ভাবে জখম করেছে?
থম মেরে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো আবইয়াজ।
মেঘার মা কেঁদে অস্থির, উনাকেই বা কি বলে সান্ত্বনা দিবে তা ভেবে পাচ্ছে না আবইয়াজ।
একটা মেয়ে এতোটা পাগল কিভাবে হয়?
সত্যিই কি মানুষ ভালোবাসার অভাবে মরে যায়? কাউকে কি এভাবে ধরে বেঁধে ভালোবাসা যায়? তা আবইয়াজের জানা নেই।
তুচ্ছ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে মেঘা কত বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেললো।
যে মেয়ে দুনিয়া উল্টায়া গেলেও নিজের গায়ে ফুলের টুকাও পড়তে দেয় না সেই মেয়ে কিভাবে নিজেকে আঘাত করতে পারে? নিজের প্রতি যত্নশীল মেয়েটাও নিজেকে আঘাত করতে দু'বার ভাবে নি, কেনো কেনো? তা কেবলই কি ভালোবাসার কারণে?
সত্যি ভালোবাসা খুবই ভয়ংকর, কাউকে ভাসায় আবার কাউকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘাকে রেস্ট রুমে সিফট করা হলো।
এখনো জ্ঞান ফিরে নি তার।
অপরাধীর ন্যায় মেঘার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো আবইয়াজ।
ক্যাবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি।
-এলোমেলো পায়ে মিষ্টির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো রিফাত।
কাঁধে হাত রাখতেই চেঁচিয়ে উঠলো মিষ্টি।
-আমি এখানে তোর সাথে নাটক করতে আসি নি রিফাত। মানুষ দেখছে আমাকে ক্ষ্যাপাস না পরিনাম ভালো হবে না।
-সব সময় আমার সাথে এতো রাগ দেখাস কেনো মিষ্টি?
-আমি তোর কে হই যে তোর সাথে রাগ দেখাবো?
-বউ, তুই আমার বউ হবি জাস্ট ক'দিনের অপেক্ষা।
-মানে?
-আম্মু বলছে আগামী সপ্তাহে তোদের বাড়ি যাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে?
মুহুর্তেই শান্ত হয়ে গেলো মিষ্টি।
-তো মিস্টার এখন কেমন ফিল হচ্ছে আপনার?
-এই তো ভয়ংকর ফিল হচ্ছে, আগে ফোনে বলতি গোলামের পুত তোরে সামনে পাইলে জুতা দিয়া মারতাম, আর এখন তিন বেলা জুতা দিয়ে মেরে বলবি গোলামের পুত তুই চিনস আমারে, আমি কে? একটু আগে না তোরে মারছি তোর হয় নাই আবার মারবো?
-তুই শুধু আমার খারাপ দিকগুলাই দেখবি ভালোবাসা দেখবি না?
-আমি খারাপ বলছি নাকি? তোর এই ত্যাড়া ত্যাড়া কথাগুলো ভালোই লাগে, খারাপ না অনুরোধ শুধু একটাই আম্মুর সামনে এমন সুশীল ব্যবহার করিস না প্লিজ।
-হ্যাঁ শাশুড়ির সাথে আজ কথা হলো, জিজ্ঞেস করলাম কুত্তার বাচ্চা কই উনি বলছে কুত্তার বাচ্চা ভাত খাচ্ছে। আমি কুত্তার বাচ্চার কি হই?
-এ ভাই কি বলিস এসব?
-আমি জানতাম নাকি ওইটা তোর মা! আমি তো তুই ভেবে কথাগুলো বলছি।
-একদিক দিয়ে ভালোই হইছে, তোর এই কথার কারণেই বিয়েটা সামনের দিকে আগাচ্ছে।
-তাহলে ট্রিট দিস, তোর অনেক বড় উপকার করে দিছি আমি।
-বিয়েটা মনে হয় আমি একা করবো তুই করবি না?
-উহু আমার তো ভয়েই গেছে তোর মতো ল্যাংচা ইঁদুরকে বিয়ে করতে।
-শাশুড়ি তোর মা'কেই বানাবো, তুই বিয়ে না করলে তোর ছোট বোনকে করবো।
-গোলামের বংশ তোর সাহস তো কম না।
-সাহসের দেখলি কি মিষ্টি? এখনো তোর বোন দুইটার দিকে নজর দেই নাই, হঠাৎ একদিন দেখবি তোর দুই বোন নিয়া আমি লাপাত্তা।
পত্রিকায় কালো মোটা মোটা অক্ষরে হেডলাইন হয়েছে, "প্রেমিকার দুই বোন নিয়ে প্রেমিক নিখোঁজ।"
রিফাতের কথায় মিষ্টি দাঁত বের করে হেসে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,"শফিকের পোলা একবার শুধু বিয়েটা হতে দে তারপর হারে হারে টের পাওয়াবো নাচতে নাচতে কি জিনিস'টাই না ঘরে আনছস তুই।"
-কিছু বলছো মিষ্টি?
-আরেহ নাহ, আমি আবার কি বলবো শফিকের চেংড়া।
-বাপের নাম ধরে টানস কেন মিষ্টি?
-ভুল কিছু বলছি? তোর বাপ শফিক না? আচ্ছা মানলাম তুই শফিকের পোলা না, এখন বল তোর বাপ কে?
-আমার বাবা শফিক মানে এই না যে তুই কথায় কথায় বাপের নাম ধরে টান দিবি।
-ভাই আমি হসপিটালে বান্ধবীকে দেখতে আসছি তোর সাথে ঝগড়া করতে না।
-সেটা বুঝাই যাচ্ছে, আসার পর থেকেই তো আমার পিছে পড়ে আছিস।
-তো কোন ছেলের পিছে ঘুরবো আমি?
-এই মিষ্টি শোন তোর সাথে সংসার টংসার কিছু হবে না বুঝলি। তুই তোর আলাদা রাস্তা দেখ আর আমি আমার, যা ভাগ আজ থেকে তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।
-ও বাবাগো তোর দেখি জবান খুলে গেছে, তোর কলিজা টাইন্না বাইর কইরা আইন্না ওজন কইরা দেখা লাগবে ওইটা কত বড় হইছে, তুই মিষ্টিরে এই মিষ্টিরে বিচ্ছেদের গল্প শুনাস, ভুলে যাস না রিফাত আজ মেঘা যেই বেডে শুয়ে আছে আগামীকাল হয়তো ওই বেডে আমি থাকবো, মেঘা শুধু জখম করেছে আর আমি শিরা কেটে ফেলবো, ভাবিস না আমি মরে গেলে তুই মুক্তি পাবি সুইসাইড নোটে তোর নাম লিখে মরবো।
-বাহ কি সুন্দর মিষ্টিস্বরে ছোটখাটো একটা ব্ল্যাকমেইল করে দিলো।
-মিষ্টি কে ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায়ও আনিস না রিফাত, আগুন ধরিয়ে দিবো। তুই শফিকের পোলা লিঙ্গ ছাড়া সিংহ নামে পরিচিতি পাবি দুনিয়ার জমিনে, মাথায় রাখিস আমার বাবা একজন নেতা।
-ভাই এবার একটু থাম মিনিস্ট্রোক করে ফেলবো এবার, হুমকি ধামকি ছাড়া ভালোভাবে কথা বলা যায় না?
-হ্যাঁ, তুই ঘাড়ত্যাড়ামি করবি আর আমি তোকে কোলে নিয়া ঘুরবো।
-সন্ধ্যা হতে চললো, যা বাড়ি যা বাসার সবাই চিন্তা করবে।
-আগায়া দে।
-তাহলে একটু পর যাই? মেঘার জ্ঞান ফিরুক।
-ঠিক আছে।
চেয়ার টেনে মেঘার মাথার পাশে বসলো আবইয়াজ।
আলতো করে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
নিজের অজান্তেই মনে পড়ে গেলো মেঘার পাগলামোর দৃশ্য।
একবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিলো আবইয়াজের।
মেয়েটা খবর পেয়ে একা-ই মধ্য রাতে ছুটে এসেছিলো আবইয়াজের কাছে।
সারারাত মাথার কাছে বসে জলপট্টি দিয়েছিলো সে।
এ নিয়ে মা অকাট্য ভাষায় কথা বলেছিলেন তার সাথে কিন্তু প্রতিউত্তরে মেয়েটা শুধু মুচকি হেসেছিলো, আমার জন্য সব কিছুই সয়ে গেছিলো সে'রাতে।
হাতে কারো স্পর্শ অনুভব করলো আবইয়াজ, ঘোর কাটিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো মেঘা তার হাতের উপর হাত রেখে অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মৃদু হাসলো আবইয়াজ।
-তুই বড় হয়েছিস মেঘা নিজের ভালো মন্দ একটু বুঝার চেষ্টা কর। নিজের ক্ষতি করে কি কখনো লাভবান হওয়া যায়?
-আমার ভালো বলতে আমি কেবল তোকেই বুঝি আবইয়াজ।
মেঘার অস্পষ্ট স্বরে বলা কথাগুলোতে কিছু একটা ছিলো, যা তীরের মতো এসে আঘাত করছে আবইয়াজের বুকে।
-আমার ভালো থাকা, ভালো খাওয়া ভালো পড়া সবকিছুর বিনিময়ে আমি শুধু তোকে চাই, আমার কিচ্ছু লাগবে না কিচ্ছু না, আমার শুধু তুই হলেই চলবে। বিলিভ মি আমি তোকে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না নিজের সর্বস্ব দিয়ে তোকে ভালোবাসবো আগলে রাখবো।
আবইয়াজ যথা সম্ভব মেঘার কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।
-তুই অসুস্থ এখন কথা বলবি না একদম, আগে সুস্থ হ তারপর কথা হবে।
মেঘার জ্ঞান ফিরেছে শুনে মেঘার কাছে আসলেন তার মা, আবইয়াজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
-তুই বস না।(মেঘা)
-তুই আন্টির সাথে কথা বল, আমি আছি।
-তোর কি হয়েছে মেঘা, এরকম'টা কেনো করলি মা আমার। কেউ কিছু বলেছে তোকে? এরকম ভুল সিদ্ধান্ত কেনো নিতে গেলি তুই?
মেঘা ঝাপসা চোখে আবইয়াজের দিকে তাকালো।
সাথে সাথে আবইয়াজ নিজের চোখ নামিয়ে নিলো।
-আ আন্টি আমি বরং বাইরে থেকে চা নিয়ে আসি আপনারা কথা বলেন।
শর্মিলা বেগম মোলায়েম কন্ঠে বললেন, লাগবে না তুমি বসো।
-সন্ধ্যা নেমে এলো হালকা কিছু না-হয় খেয়ে নিবেন আমি নিয়ে আসি। বলে আর এক মুহুর্ত ও না দাঁড়িয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান করলো আবইয়াজ।
-ছেলেটা খুব ভালো তাইনারে মেঘা।
-তোমার পছন্দ হয়েছে আম্মু?
-এখানে পছন্দ অপছন্দের কি?
-কিছু না।
হসপিটালের নিচে এক কোণে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো আবইয়াজ।
একদিকে মেঘার পাগলামো অন্যদিকে নিজের ভালোবাসার মানুষ।
কাকে বেছে নিবে সে? বন্ধুত্ব নাকি ভালোবাসা!
এই মেয়েটার পাগলামো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, এগুলো কিভাবে থামাবো আমি?
এখন মেঘাকে ছেড়ে দিলে নির্ঘাত আবারো আত্মাহত্যার পথ বেছে নিবে।
কি এক ঝামেলায় জড়িয়ে গেলাম আমি।
পুত্রবধূকে দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ নীলিমা হক, মাশাআল্লাহ বংশ যেমন ভালো মেয়েও তেমন সুন্দর এখব ব্যবহার ভালো হলেই হলো।
চলবে.....