#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ১৩
এবার হাতের ইশারায় রাজিয়া খাঁনকে থামিয়ে দিলেন আহনাফ খাঁন।
-আহ রাজিয়া বাদ দাও না।
"কি হলো ফাইয়াজ বলো মেয়েটা এবাড়ির কে হয়?"
"আম্মু ও বাড়ির কে হয় নাহয় এটা বিষয় না, নির্বিশেষে আমরা সবাই মানুষ, তোমার শরীরে যেমন লাল রক্ত বইছে সুভার শরীরেও তার ব্যতিক্রম নয়। তুমি আমি আমরা যদি টেবিলে বসে খেতে পারি তবে ও কেনো নয়?"
"ফাইয়াজ তুমি হয়তো গুলিয়ে ফেলছো আমরা এবাড়ির মালকিন আর ও এবাড়ির কাজের মেয়ে।"
রাজিয়া খাঁনের কথায় টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ফাইয়াজ।
-কতবার বলেছি আম্মু তুমি সুভা'কে এভাবে অপমান করে কথা বলতে পারো না! সুভা নাতো এ বাড়ির কাজের মেয়ে আর নাতো এবাড়ির আশ্রিতা।
ফাইয়াজ।
চিৎকার করে উঠলেন রাজিয়া খাঁন।
তোমার সাহস তো কম নও তুমি আমার মুখের উপর টেবিলে থাপ্পড় দেও।
কে হয় এই মেয়ে এবাড়ির।
-সেটা সময় বলে দিবে।
কথা'টা বলেই হন হন করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ফাইয়াজ।
পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরলো সুভাষিণী।
করুনস্বরে বললো, পাতের খাবার ফেলে উঠতে নেই এতে নাকি অমঙ্গল হয়। খাবারটুকু খেয়ে যান।
মেয়েটার কথায় মায়া হলো ফাইয়াজের।
চেয়ারে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সুভা'কে বললো নিজের জন্য খাবার বেড়ে আনতে।
সুভা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
এবার ধমক দিয়ে বললো ফাইয়াজ।
-কি বলি কানে কথা যায় না? যাও তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসো।
সুভাষিণী ভয়ে ভয়ে রাজিয়া খাঁনের দিকে তাকালো।
রাজিয়া খাঁন অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন সুভা'র দিকে যেনো চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দিবেন তাকে।
সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো সুভা।
সাহস পেলো না নিজের জন্য খাবার বাড়তে।
বুঝেছি তুমি আমার কথা শুনবে না।
এবার ফাইয়াজ নিজেই একটা প্লেটে কিছু ভাত আর গরুর গোস্তো নিলো।
দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলেন রাজিয়া খাঁন।
ফাইয়াজ তার পাশের চেয়ারে বসতে বললো সুভাকে।
রাগে তেতিয়ে উঠা মস্তিষ্ক আর দমিয়ে রাখতে পারলেন না রাজিয়া খাঁন।
তিনি তার কথায় অনড়।
চেয়ারে ঠাই হলো না সুভার।
কাটকাট গলায় সুভাকে ফ্লোরে বসে খেতে বললেন রাজিয়া খাঁন।
খাবার প্লেট নিয়ে নিচে বসে পড়লো সুভা।
নিচে নাহয় বসে খেলো চেয়ারে বসে খাওয়ার লোভ তার কখনোই ছিলো না কিন্তু এতো অপমানের পরও কি আর গলা দিয়ে খাবার নামবে?
নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে দুফোঁটা জল এসে ভাতের প্লেটে পড়লো।
মৃদু হেসে ভাতের প্লেট নিয়ে চেয়ার ছেড়ে সুভার পাশে গিয়ে বসলো ফাইয়াজ।
উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো, চলো আজ তুমি আমি একসাথে নীচে বসে খাই।
"ছিঃ ফাইয়াজ! আজকাল তোমার রুচি এতো নীচে নেমে গেছে? আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে যে তুমি আমার ছেলে।
-আমি তো খারাপ কিছু করিনি আম্মু।
-আহনাফ তুমি কি কিছু বলবে না?
আপন মনে খেয়ে যাচ্ছেন আহনাফ খাঁন।
-ছেলেরা বড় হয়ে গেছে রাজিয়া তারা নিজের ভালোমন্দ বুঝে। তাদেরকে তাদের'টা বুঝতে দাও না।
ভাতের মধ্যে জল ঢেলে উঠে দাঁড়ালেন রাজিয়া খাঁন।
যার যা খুশি করো, এ বাড়ি আর থাকার উপযোগী নয়।
বাপ ছেলে মিলে আমার সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়িটা আশ্রমে পরিনত করেছে।
যাকে নয় তাকে ধরে ধরে বাসায় নিয়ে আসছে।
সুভা টলমলে চোখে রাজিয়া খাঁনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-ওভাবে না তাকিয়ে খাবার'টা শেষ করো কালো পদ্ম, আর কতক্ষণ আমি তোমার জন্য বসে থাকবো।
মুচকি হাসলো সুভা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেতে লাগলো সে।
আহনাফ খাঁন চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।
গিন্নির মেজাজ খারাপ তা বহু আগেই টের পেয়েছেন।
রাত ১১ টা আবইয়াজের কোনো খবর নেই।
রাগে ফুসতে লাগলেন রাজিয়া খাঁন।
কত আদরের দুই ছেলে, দুইটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
নিজেকে একটু শান্ত করে আবইয়াজের কাছে কল করলেন।
ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই প্রশ্ন করে বসলেন।
-কোথায় তুমি আবইয়াজ?
-ওহ আম্মু তোমাদের না বলেই আমি লন্ডনে চলে এসেছি। আসলে সব কিছু এতো দ্রুত হয়েছে যে বলার সময় পাই নি।
"ফাইজলামি বন্ধ করো আবইয়াজ, তোমার সাথে ফাইজলামি করার জন্য আমি এতো রাতে কল করি নি।"
-মিথ্যা না আম্মু সত্যি আমি লন্ডন চলে এসেছি।
-লন্ডন কি তোমার নানার বাড়ি যে বাসে উঠলে আর চলে গেলে।
-শশুর বাড়ি।
-চুপ করো বেয়াদব। কোথায় আছো এখন?
"বন্ধুর মুসলমানির দাওয়াত খেতে এসেছি।"
আবিইয়াজের কথায় মেজাজ চটে গেলো রাজিয়া খাঁনের।
চুপচাপ আহনাফ খাঁনের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলেন।
আহনাফ খাঁন কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন,
-কি?
-কথা বলো তোমার আদরের ছেলের সাথে, জিজ্ঞেস করো কোথায় আছে।
"হ্যালো আবইয়াজ?"
"হ্যাঁ আব্বু বলো।"
"কোথায় তুমি?"
"শশুর বাড়ি।"
"মশকরা না করে সত্যি করে বলো তুমি কোথায়?"
বন্ধুর বাসায় আছি।
"বাসায় ফিরবে না আর?"
আবইয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
"বাসায় ফিরে কি হবে কোনো পিছুটান নাই, বউ থাকলে নাহয় বউয়ের টানে বাড়ি ফিরতাম।"
"তুমি শুধু নষ্ট হও নি একেবারে বরবাদ হয়ে গেছো, কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও ভুলে গেছো।"
"এবার বিয়ে করে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে চাই।"
"আমার দাদাজান ছিলেন একজন ভদ্র সুপুরুষ, তোর দাদা ছিলেন একজন মার্জিত পুরুষ, আমিও একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ, তোর ভাই ও নমনীয় যুবক মাঝখান থেকে তুই এতো বড় অসভ্য কোথা থেকে এলি?"
"সবে মাত্র তিন পুরুষের হিসেব মিললো, তোমার ১৪ পুরুষের হিসেব মিলিয়ে দেখো তারা আমার থেকেও বড় বড় আকাম করে বসে ছিলো। সভ্যতা তোমার পূর্বপুরুষের মধ্যেই ছিলো না।"
রাগে শরীর গরম হয়ে এলো আহনাফ খাঁনের।
ফোন ছুড়ে দেয়ালে মারলেন।
-রাস্তার ছেলেদের সাথে থেকে তোমার ছেলে একেবারেই বেঁকে গেছে, একটা প্রবাদ আছে না সঙ্গ দোষে লোহা জলে ভাসে। তোমার ছেলের অবস্থা ঠিক তেমনই।
-ছেলে বেঁকে গেলে তোমার কারণেই বেঁকেছে, অতিরিক্ত লায় দিয়ে মাথায় তুললে তুমি তুলেছো।(রাজিয়া খাঁন)
"মাথা গরম হয়ে আছে আর কথা বলো না প্লিজ।"
মাথায় ধরে বিছানায় বসে পড়লেন আহনাফ খাঁন।
তার পাশেই বসলেন রাজিয়া খাঁন।
কোমল হাতে আহনাফ খাঁনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।
রিফাতের পাশে শুয়ে আছে আবইয়াজ।
-এভাবে কথা বললি কেনো আংকেলের সাথে?(রিফাত)
-কি করবো শালা আমার বিয়ে নিয়ে কেউ সিরিয়াস-ই হচ্ছে না। এখন রাকিব এই বুদ্ধি দিলো তাতে নাকি তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে, কি আর করার একবার চেষ্টা তো করা-ই যায়।
রিফাত আবইয়াজের আরো কাছাকাছি এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো।
নাক চেপে ধরলো আবইয়াজ।
-শালা তোর গায়ে কি গন্ধরে, কতদিন গোসল করিস না, বিয়ের পর তো বেটা বউ পালাবে।
-তোর মতো পাইছস নাকি, রোজ গোসল করি রোজ, হুহ, এসব ঘেরান বেটা ঘেরান শুঁকে দেখ।
-না ভাই এবার তোর কাছে গেলে নির্ঘাত বমি চলে আসবে।
-তুই নাকের ডাক্তার দেখা, তোর নাকে সমস্যা তাই আজেবাজে গন্ধ পাস।
মুহুর্তেই পাশে সাইলেন্ট করা ফোন কেঁপে উঠলো।
বাড়ি থেকে কল আসছে ভেবে কল রিসিভ করলো না আবইয়াজ।
বার বার কল আসতে লাগলো।
কপাল কুঁচকে ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো, মেঘা কল করেছে।
কল রিসিভ করে কানে তুলতেই শুনতে পেলো ওপাশ থেকে আহত গলায় সে বলতে লাগলো, তুই ছাড়া আমি ভালো নেই আবইয়াজ। আমি প্রতিনিয়ত নিজের মৃত্যু কামনা করি।
এমন জীবন আমি চাই না, বিধাতা হয় তোকে আমার কপালে লিখে দিক আর নয়তো মৃত্যু।
"মেঘা প্লিজ তুই নিজেকে একটু শান্ত কর, আমি তোর ভালো চাই, আমার মতো ছেলেকে বিয়ে করে তুই কখনো সুখী হতে পারবি না, ইউ ডিজার্ভ সামওয়ান বেটার দ্যান মি।
"আই ডোন্ট নীড এনিওয়ান বেটার দ্যান ইউ, আই নীড ইউ আই ডিজার্ভ ইউ। আমি আমার ভালো বলতে শুধু তোকেই বুঝি কিন্তু তুই আমার ভালো চাইলি কিন্তু আমাকে চাইলি না তাও আবার আমার থেকে আমার ভালো থাকাটা কেড়ে নিয়ে বলছিস ভালো থাকতে।
উচ্চস্বরে হেসে উঠলো মেঘা, তবে এহাসি কোনো খুশির হাসি ছিলো না, এক আঁকাশ সমান ব্যর্থতার বুক ফাটা আর্তনাদ ছিলো।
এই রসকষহীন হাসির আড়ালে যে কলুষিত অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিলো তার উপসংহার মিলাতে মিলাতেই মেঘা আজ ক্লান্ত।
শান্তি চাই এক মুঠো শান্তি।
আবইয়াজ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো।
-খেয়েছিস।
মেঘা ছোট করে এক বাক্যে উত্তর দিলো, হুম।
-পাগলামো কেনো করছিস?
-তুই একবার বল ভালোবাসিস।
-বাসি না।
-এটা কি তোর মনের কথা? কখনো এক মুহুর্তের জন্যও ভালোবাসিস নি আমায়?
-না।
-বেশ তবে আর কখনো ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোর সামনে দাঁড়াবো না।
আবইয়াজ কিছু বলতে যাবে তখন-ই টুথটুথ শব্দ করে কল'টা কেটে গেলো।
আবইয়াজের কথায় ক্ষিপ্ত হলো রিফাত, এভাবে একটা মানুষের মুখের উপর না বলা যায়?
" এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না রিফাত, আমি তার অনুভূতিকে আর প্রশ্রয় দিতে চাচ্ছি না, জীবনে শারীরিক চাহিদাটা-ই সব নয় ভালোবাসারও প্রয়োজন হয়।
আমি চাই না সে আবেগে গাঁ ভাসিয়ে আমাকে বিয়ে করুক কারণ আমি জানি তার সাথে এক বিছানায় আমি থাকলেও মন থেকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না।
আমার সবকিছু আবিরাকে ঘিরে, তাকে নিয়েই যে আমি কল্পনায় আমার ছোট্ট একটা সংসার সাজিয়ে ফেলেছি।
তবে হ্যাঁ আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো মেঘাকে ভালো রাখার, তাকে আমি আবার আগের মতো হাশিখুশি প্রাণবন্ত করে তুলবো।"
"সত্যি আবইয়াজ আমার আর কিছু বলার নেই।"
"কিছু বলতেও হবে না তুই ঘুমা।"
রান্নাঘরের কাজ শেষ করে সবেমাত্র রুমে এলো সুভাষিণী।
রুম থেকে খ্যাঁচখ্যাঁচ শব্দ আসতে লাগলো, ডিম লাইটের আবছা আলোয় স্পষ্ট কোনো ছায়ামূর্তি দেখতে পেলো।
ভয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো সুভা, মুখ দিয়ে যেনো কোনো আওয়াজ-ই বের হচ্ছে না।
কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো, "ক কে?"
ছায়ামূর্তিটি ধীরে ধীরে সুভার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে , পিছুপা হাটতে লাগলো সুভা।
কয়েক কদম পিছাতেই দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকে গেলো, অবশিষ্ট আর এক ইঞ্চি ও জায়গা নেই যে সুভা সরে দাঁড়াবে।
সুভার দু'পাশে দু হাত দিয়ে একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো সেই ছায়ামূর্তি, ভয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো সে।
ঘনঘন নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসছে এক অজানা ভয়।
কুড়ি-পুনেরো মিনিট একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো সুভা, কারোর স্পর্শ না পেয়ে পিঠপিঠ করে চোখ মেলে তাকালো।
আশেপাশে কেউ নেই।
দৌড়ে রুমের লাইন অন করলো।
গোটা রুম তন্নতন্ন করে খুঁজলো কিন্তু কাউকেই পেলো না সে।
তবে কি এসব আমার মনের ভুল ছিলো? সারাদিনের উল্টাপাল্টা চিন্তাগুলো রাতে এসে কল্পনায় ধরা দেয়।
এগুলো কি কেবলই আমার কল্পনা।
নিজের মাথায় চাটি মেরে মৃদু হাসলো সুভা।
সকাল সকাল উঠেই ফুলের দোকানে চলে গেলো আবইয়াজ।
আজ প্রথম কুত্তার মা'কে প্রপোজ করবো।
দোকানী জিজ্ঞেস করলো কি ফুল নিবেন স্যার?
মাথা চুলকাতে লাগলো আবইয়াজ, কুত্তার মা কি ফুল পছন্দ করে সেটাই তো জানি না।
ব্যাপার না আপনার দোকানে যত রকমের ফুল আছে সব ধরনের ফুল দিয়ে দিন।
দোকানী অবাক চোখে তাকিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, সব ধরনের ফুল?
-হুম।
রাকিব বললো আরে বেটা তোর মাথা ঠিক আছে? দেখছিস এখানে কত রকমের ফুল?
আবইয়াজ বলে উঠলো,
"এই ফুল কুত্তার মা'র কাছে কিছুই না,, সে যদি বলে আমি পুরো দোকান তার সামনে এনে রাখবো।"
ফুরফুরে মেজাজে দোকানী এক এক করে দশ'টি বড় বড় ফুলের ঝুড়ি আবইয়াজের সামনে এনে রাখলো।
নেন স্যার এই সব ফুলে পঞ্চাশ হাজার টাকা হইছে।
দোকানির কথা শুনে রাকিবের চোখ চড়কগাছে, ভাই এতো টাকার ফুল কেনার কি খুব দরকার ছিলো?
-ছিলো বৈকি অবশ্যই ছিলো, বললাম না! কুত্তার মা বললে পুরো দোকান উঠিয়ে নিয়ে যাবো।
-তুই শালা কম লুইচ্চা না, তখন পঞ্চাশ টাকার আইসক্রিম খেতে চাইলাম বললি তোকে বিক্রি করে দিলেও পঞ্চাশ টাকা বের হবে না আর এখন পঞ্চাশ হাজার টাকার ফুল কিনে নিলি?
-তোর জীবনে তুই আইসক্রিম খাস নি রাকিব? এমনিতেই আজ সন্ধ্যায় পার্টি আছে, যা খুশি পেট পুরে খাস।
-ভাই তুই একখান চিজ।(রাকিব)
-শোন ভাই যে আমি নিজের পেছনে এক টাকা খরচ করতে তিন বার পকেটে হাত দেই সেই আমি তোদের পেছনে টাকা খরচ করতে ভাবিও না, কিন্তু আজ আমার গার্লফ্রেন্ড এর পেছনে খরচ করছি বলে তোদের হিংসা হচ্ছে?
আবইয়াজের কথায় হেসে উঠলো রিফাত।
মাথা ঠান্ডা রাখ আবইয়াজ, তা পার্টি কোথায় করবি।
-কুই'যীন হাব রেস্তোরাঁয়। ওইটা সুন্দর নাহ? ভিউ ভালো আসবে।
-বাহ, তাহলে তো খাওয়া দাওয়া জমজমাট হবে।(রাকিব)
-সে আর বলতে, গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রথম মিট বলে কথা।
রিফাতের কথায় মুচকি হাসলো আবইয়াজ।
দোকানী সাদিন রিফাত রাকিব ও আবইয়াজের জন্য চারটি চা নিয়ে আসলো।
আবইয়াজ দোকানির মুখের দিকে তাকালো, কি হাস্যউজ্জ্বল চেহারা, খুশির চাপ চোখেমুখে উপচে পড়ছে।
আবইয়াজ মৃদু হেসে দোকানিকে প্রশ্ন করলো, সবার জন্য চা নিয়ে আসলেন যে? কাস্টমারকে যদি এভাবে চা খাওয়াতে থাকেন তাহলে মাস শেষে দেখা যাবে লাভ তো হলোই না বরং দোকানের আসল টাকা বের করা মুশকিল।
আবইয়াজের কথায় স্মিথ হেসে দোকানী বললেন,
কখনো কখনো সারা মাসেও এতো ফুল বিক্রি হয় না আজ একদিনে যতগুলো ফুল বিক্রি হয়ে গেলো, সেই খুশিতে একটু তো চায়ের আড্ডা বসানোই যায়।
আবইয়াজ পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, আপনি খুশি?
-অনেক অনেক খুশি।
দোকানির এই হাসিখুশি মুখ দেখে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করলো আবইয়াজের।
কারোর খুশিতেও বুঝি এভাবে আনন্দ পাওয়া যায় তা আগে জানা ছিলো না আবইয়াজের।
চা খাওয়া শেষে ফুলের ঝুড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো আবইয়াজ।
কিভাবে কি করলে আবিরা খুশি হবে সেটা নিয়েই জল্পনা কল্পনা করতে ব্যস্ত সে।
আজ পুরো রেস্তোরাঁর এক নতুন রূপ দিলো আবইয়াজ।
সারাটা দিন ব্যস্ততায় কাটলো তার।সন্ধ্যা নামার আগে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আবিরাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
সারাটা দিন ব্যস্ততায় কাটলেও সন্ধ্যার এই কয়েকটা মিনিট যেনো কাটতেই চাইছে না, অপেক্ষার প্রহর বুঝি এমনই হয়।
কখন আবিরাকে দেখবে তা ভাবতেই মন আনচান করে উঠলো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রেকটিস করতে লাগলো কিভাবে আবিরাকে ভালোবাসার কথা বলা যায়।
ইশ কি অস্বস্তি লাগছে।
ভাবনায় ছেদ পড়লো রিফাতের ডাকে।
-আবইয়াজ আবিরা চলে এসেছে।
মৃদু হাসলো আবইয়াজ।
লাল রঙের সেই ওড়নাটি রিফাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো, এই ওড়না দিয়ে চোখে বেঁধে নিয়ে এসো আমার মহারানী কে।
রিফাত ওড়না নিয়ে বাইরে চলে আসলো।
আবিরাকে গাড়ি থেকে হাত ধরে নামালো আদি।
চোখ বেঁধে দিলো মোমো।
-ভাবি আমার চোখ বাঁধলে কেনো?
-সারপ্রাইজ।
-কিসের সারপ্রাইজ এই অসময়ে?
-আবিরা আমি তোর ভাই আমি নিশ্চয়ই তোকে মেরে ফেলবো না? তো ভয় পাস না আমি আছি।
আদির কথায় ভরসা পেলো আবিরা।
টিপটিপ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আবিরা তার পাশাপাশি আবিরার সাদা গ্রাউন ধরে হাটছে আদি।
আবইয়াজের সামনে এনে চোখের বাঁধন আলগা করে দিলো মোমো।
আবইয়াজ খতিয়ে দেখতে লাগলো তার কুত্তার মা'কে।
দুধে আলতা গায়ের রঙ পরনে সাদা গ্রাউন কোমর বিছানো চুল, অতোও সাজগোজ নেই, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চিকনচাকন রানী এ যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা সাদা পরী।
তোমাকে এক লাইনে আমি কিভাবে বর্ণনা করতে পারি।
এমন হুর-পরীর থেকে চোখ ফেরানো দ্বায় আয়-হায় আমি তো শেষ।
বুকে হাত দিয়ে ধপ করে নিচে পড়ে গেলো আবইয়াজ।
আগেও তো দেখেছি তোমায় কই এমন তো লাগে নি।
"মরার উপর খাড়ার ঘা। ভং ধরিস না আবইয়াজ উঠে পড়।
রাকিবের কথায় ক্ষিপ্ত হলো আবইয়াজ কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ পেলো না।
আজ বিশেষ দিনে এই মাদ্রিদের সাথে ঝামেলা করার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
আবিরার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো আবইয়াজ অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো, " পিচ্চি বউ।"
আবিরা ড্যাবড্যাব চোখে চারিদিকে তাকিয়ে তাকলো।
এখানে কি হচ্ছে এখনো কিছুই বুঝতে পারলো না সে।
আবইয়াজ আবিরার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,"ছেলেকে সাথে আনো নি?"
আবইয়াজের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে আবইয়াজের দিকে তাকালো আবিরা।
-আরে আবিরা তুমি আবইয়াজের কথা বুঝতে পারো নি? আবইয়াজ তোমার কুত্তার কথা বলছে।
রাকিবের কথায় চ্যাত করে উঠলো আবইয়াজ।
গার্লফ্রেন্ড কুত্তা পছন্দ করে মানে কুত্তাকে আর কুত্তা বলা যাবে না ও আমাদের সন্তান। বুঝছোস রাকিব?
উচ্চস্বরে হেসে উঠলো রিফাত।
আবইয়াজের রাগী চোখে তাকানো দেখে ফের নিজের মুখ চেপে ধরলো সে।
ডান হাত দিয়ে নিজের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলতে লাগলো, এই হাসি তুই ও না আস্তো একটা বদ যখন তখন বেরিয়ে আসিস। বকে দিয়েছি তুই রাগ করিস না আবইয়াজ হাসি আর আসবে না বলেছে।
-আমাকে কি বাচ্চা মনে হয় তোর? দাঁত কটমট করে বলে উঠলো আবইয়াজ।
-ভাই শান্ত হো, যা ওখানটায় গিয়ে বস দু'জন।
আবিরা আদিকে প্রশ্ন করলো, এখানে কি হচ্ছে।
আদি মৃদু হেসে আবিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-সময় হোক সব জানবি।
আবইয়াজ ও আবিরা মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।
আবিরার চোখে চোখ রেখে আবইয়াজ বললো, কিছু তো বলো?
-কি বলবো?(আবিরা)
-একটু তো প্রশংসা করো, আমার দিকে তাকিয়ে দেখো আমার কোন জিনিস নজরকাড়া তোমার কাছে মনে হয়।
আবইয়াজের কথায় স্মিথ হাসলো আবিরা।
-আপনার চোখ জোড়া খুব সুন্দর।
আবিরার কথায় আবইয়াজ লাজুক হেসে বললো, "তোমার চোখ গুলোও অনেক সুন্দর।"
পেছন থেকে রিফাত বলে উঠলো সত্যি আবইয়াজ তোর চোখ অনেক সুন্দর।
রিফাতের কথায় আবইয়াজ বেশ রাগান্বিত স্বরে বললো,"তো এখন কি চোখ খুলে তোকে দিয়ে দিবো?
শালা প্রেমের মধ্যে বাম হাত ঢোকাস, আমার প্রশংসা করার জন্য কুত্তার মা আছে তোকে বলছি আমার চোখ সুন্দর বলতে?
চলবে,,,,,,,