#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ১৫
সুভা তড়িঘড়ি করে নিজের রুমে এসে শাড়ি চুড়ি খুলে ফেললো।
এমন সাজুগুজু অবস্থায় রাজিয়া খাঁন দেখলে আজ আর রক্ষে নেই।
নির্ঘাত বলে উঠবেন এমন সাজগোছ করেই উনার ছেলের মাথা খাচ্ছি।
আলতাটুকু ধুয়ে ফেলার সময় পেলো না সুভা তার আগেই ডাক পড়লো।
"কালা মাসি।"
আবইয়াজের কন্ঠস্বর পেয়ে দ্রুত উপরে গেলো সুভা।
আবইয়াজের রুমে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে।
হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
-বাহ এতো তাড়াতাড়ি লুক চেঞ্জ?
আবইয়াজের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো সুভা।
-মানে?
-বেশবোস পালটে ফেললে যে?
-উনি দেখলে যদি কিছু বলেন সেজন্য।
-উনি কে?
-আপনার মা?
-ওহ, উনাকে আন্টি বলেই ডেকো।
সুভা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
-ওহ হ্যাঁ যে জন্য ডাকলাম।
-হুম বলুন।
-খুব ভালো কফি বানিয়েছো তার জন্য ধন্যবাদ।
মুহুর্তে সুভার মুখ খানা জ্বলজ্বল করে উঠলো।
ফাইয়াজের জন্য কিছু করতে পারলে বেশ ভালো লাগে তার।
কেনো এমন হয়? দুই দিনের চেনা জানা একটা মানুষের প্রতি এতো মায়া এটাও কি সম্ভব?
আবইয়াজ পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, কি হলো ড্যাবড্যাব করে কি দেখছো।
সুভা চোখ নামিয়ে নিলো।
আমতা আমতা করে বললো ককিছু না।
-আম্মু ঘুম থেকে উঠেছে?
সুভা মাথা নাড়িয়ে না জানালো।
-আচ্ছা তুমি যাও।
নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো সুভা।
পেছন থেকে আবারও আবইয়াজ ডেকে উঠলো।
-কালা মাসি।
সুভা ছোট করে উত্তর দিলো, "হু।"
-আসো গালে একটা হাম্মি দিয়ে যাও।
আবইয়াজের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মেয়েটা।
একটা মানুষ এতোটা বেফাঁস হয় কি করে।
এভাবে একটা মেয়েকে কি বলা যায়?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো সুভা।
-তুমি আসবে নাকি আমিই এসে তোমার ললাটে আমার অধরযুগল ছুঁইয়ে দিবো।
লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেললো সুভা।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আমি যাচ্ছি।
দৌড়ে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ালো সে।
মুহুর্তেই ডোর বেল বেজে উঠলো।
দরজা খুলে দেখলো আশফাকের আম্মা এসেছেন।
মৃদু হাসলো সুভা।
আশফাকের আম্মা সুভাকে প্রশ্ন করলেন আজ এতো সকালে গোসল করলি যে?
সুভা থমথমে চেহারায় বলে উঠলো, ক কই না তো?
-ওই তো তোর চুল ভেজা দেখাচ্ছে।
-ও ওহ আসলে গরম লাগছিলো এর জন্য।
কথাগুলো বলতে বলতে চুল গুলো হাতখোঁপা করে নিলো সুভা।
আশফাকের আম্মা রান্নাঘরে গিয়ে বাড়ির সবার জন্য নাশতা বানাতে লাগলেন।
উনাকে হাতে হাতে সাহায্য করছে সুভা।
উপর থেকে ফাইয়াজ কালো পদ্ম বলে ডেকে উঠলো।
সুভা দ্রুত ওড়নায় হাত মুছে ফের আবইয়াজের রুমে গেলো।
সবে মাত্র গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে আবইয়াজ।
কোমরে শুধুমাত্র একটি সাদা তোয়ালে প্যাচানো। লোমে আবৃত উন্মুক্ত বুক দেখে যে কেউ চাইবে সেই বুকে নিজেকে আড়াল করতে।
এতোটা সুন্দরও কি মানুষ হয়।
দেখে মনে হচ্ছে বিদেশী ছেলে।
দেখতে যেমন বিদেশী তেমনই তার চালচলন ও বিদেশিদের মতো।
রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে খুব সূক্ষ্মভাবে আবইয়াজ কে খতিয়ে দেখছে সুভা।
আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো আবইয়াজ, নিজের প্রতিচ্ছবির পাশাপাশি সুভাকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো সে।
-এই কালা মাসি সমস্যাটা কি তোমার। একটুর জন্য আমার মান সম্মান ইজ্জত সব খেয়ে নিচ্ছিলে।
কি চাই এখানে তোমার?
-আপনিই তো ডেকেছিলেন।
আবইয়াজ এবার রাগত্ব স্বরে বললো, আমি ডাকি নি তোমার ভাতার ডেকেছে, যাও এখান থেকে।
আবইয়াজের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না সুভা।
সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।
চিন্তিত হয়ে নিচে ফিরে এলো সুভা।
ডাইনিংরুমের চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বার বার আওড়াতে লাগলো সে।
মেজাজ দেখিয়ে নিচে নেমে এলো ফাইয়াজ।
সুভার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।
সুভার হাত দুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগলো, কি বলেছিলাম? সকালে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিতে দিলে না কেনো? তারপর যখন রুমে আসার জন্য ডাকলাম আসলে না কেনো? আমার কথা শুনতে ইচ্ছে করে না, বিষ লাগে আমাকে?
সুভা ছলছল নয়নে ফাইয়াজের দিকে তাকালো যেনো এখনই আকাশ ফেটে বৃষ্টি নামবে।
ফাইয়াজ সুভার কান্নাভেজা চোখ দেখে সাথে সাথে হাতদুটো ছেড়ে দিলো।
অনুনয়ের স্বরে বললো, "স সরি আমি বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।"
কয়েক মিনিট নিরব থাকলো দু'জন।
ফাইয়াজ পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,"আসোনি কেনো কালো পদ্ম?"
সুভা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো, "সকালে এসেছিলাম তো, তারপরেও এসেছিলাম আপনি আমাকে ধমকালেন।"
ফাইয়াজ এবার হাতের ইশারায় সুভাকে থামিয়ে দিলো।
আসোনি সেটা আলাদা কথা কিন্তু বিশ্বাস করো কালোপদ্ম আমি তোমার মুখ থেকে মিথ্যা কথা শুনতে চাই না, তোমার মুখে যে মিথ্যা মানায় না।"
"আমি মিথ্যা বলছি না।"
"বাদ দাও আমি আর ওই টপিক উঠাতে চাচ্ছি না যাও তুমি।"
এবার সুভার চোখ গেলো ফাইয়ের হাতের দিকে।
হাতে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই ঠিক রাতে যেমন'টা দেখেছিলো তেমনই।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সব চিহ্ন উবে গেলো?
মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু তা আর জিজ্ঞেস করা হলো না।
এই মুহুর্তে এসব প্রশ্ন করার মতো দুঃসাহস সুভার নেই।
মনে থাকা হাজারো প্রশ্ন মনের মধ্যেই চেপে রাখলো সে।
মিনমিন গলায় বললো আমি আসি।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে হাজারো কথা ভাবাচ্ছে তাকে।
ভোর হতে এই পর্যন্ত যা যা ঘটলো তা কি অদ্ভুত নয়?
উনার কথানুযায়ী সকালে সেজে উনার রুমে গেলাম কিন্তু উনি বলছেন যাই নি।
পরেও যখন উনি ডাকলেন তখন ও গিয়েছিলাম তখন ধমকের স্বরে বেরিয়ে যেতে বললেন এখন বলছেন আমি নাকি যাই-ই নি।
রাতে উনাকে সুস্থ দেখলাম আবার ভোর বেলা অনেক জখম এখন আবার সব আঘাত উধাও কি করে সম্ভব এগুলো?
মাথাটা ভনভন করে উঠলো।
কি এক বেড়াজালে আটকা পড়ে গেলাম আমি।
না কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছি আর না কাউকে বুঝাতে পারছি।
পেছন থেকে আশফাকের আম্মা ডেকে উঠলেন।
-সুভা, নাশতাগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখো।
ধ্যান ভাঙলো সুভার।
মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
এক এক করে নাশতাগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখলো।
উপর থেকে আহনাফ খাঁন ও রাজিয়া খাঁন একই সাথে নিচে নেমে এলেন।
তার কিছুক্ষণ পর একইরকম দেখতে দুটো ছেলে নিচে নেমে এলো।
ব্রু কুচকে তাকালো সুভা।
এবার বোধহয় তার হিসেব মিলেই গেলো।
হ্যাঁ ওই তো দেখা যাচ্ছে একজনের হাতে পোড়া কাটার দাগ আর একজনের হাতে এসবের কিছুই নেই।
কিন্তু উনি কোনজন?
যার হাতে কোন দাগ নেই সেই হবে হয়তো! তাহলে সকালে আমি কার ঘুম ভাঙালাম আর কে-ই বা আমাকে হাম্মি খেতে চাইলো।
নিজের ভাবনার মধ্যেই বার বার আটকা পড়ে যাচ্ছে সুভা।
এই ধাঁধার সমাধান দিবে কে।
চেয়ারে বসলেন রাজিয়া খাঁন ও আহনাফ খাঁন।
ফাইয়াজ জোরে বলে উঠলো, "কালোপদ্ম তুমিও বসে পড়ো না।"
কালোপদ্ম ডাক শুনে ঠোঁট উল্টিয়ে তাকালো আবইয়াজ।
বাপরে প্রেম একেবারে উথলায়ে পড়ে।
রাজিয়া খাঁন জারি মেরে বললেন, এই মেয়ে এখানে বসলে আমি উঠে চলে যাবো।
আহনাফ খাঁন ফাইয়াজকে বললেন সকাল সকাল ঝামেলা বাঁধিও না ফাইয়াজ।
ফাইয়াজ চুপচাপ খেতে লাগলো।
আবইয়াজ চেয়ারে বসতে বসতে বললো, "লাল শাড়ি লাল চুড়ি লাল টিপ পায়ে আলতা পরেও তো মাঝে মধ্যে আব্বুর ঘুম ভাঙিয়ে দিতে পারো আম্মু।"
আবইয়াজের কথায় কেশে উঠলো ফাইয়াজ।
আবইয়াজ ফাইয়াজের দিকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো, তোর আবার কি হলো ভাইটু।
"কিছু না।"
আবইয়াজ ফের বলে উঠলো,
-তো যে কথা বলছিলাম আম্মু আব্বুর জন্য কিন্তু আরেকটা বিয়ে জায়েজ আছে, তুমি তো আর লাল লাল পড়ে আব্বুকে সারপ্রাইজ দাও না নতুন কেউ আব্বুর জীবনে আসলে নতুনত্ব কিছু দেখাবে।
-চুপ থাকো বেয়াদব, একটু তো সভ্য হওয়ার চেষ্টা করো। নিজের মা বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এটুকুও বোধবুদ্ধি কি তোমার নেই।
রাজিয়া খাঁনের কথায় ফিকে হাসলো আবইয়াজ।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে কথাগুলো গিলছে সুভা।
অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো, বেফাঁস বেশরম নির্লজ্জ লোক একটা।
খেতে খেতে রাজিয়া খাঁন ফাইয়াজকে বললেন, ও না-হয় নষ্ট তুমি তো আর এমন নও ফাইয়াজ, তুমিও তো চাইলে পারো তোমার বাবার অফিসে গিয়ে বসতে।
ফাইয়াজ ভাবলেশহীন ভাবে বললো, বাবা সচল অবস্থায় বাবার চেয়ারে তার ছেলে গিয়ে বসবে এটা কি বেয়াদবি দেখায় না আম্মু? উনি যতদিন বেঁচে আছে ততদিন উনিই অফিস দেখাশোনা করুক, উনার কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।
হেসে উঠলো আবইয়াজ।
- তোমার ছেলে সভ্যতার চূড়ায় পৌঁছে গেছে আম্মু।
আবইয়াজের দিকে ক্ষীণদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন রাজিয়া খাঁন, "ও আর যাই করুক অন্তত তোমার মতো অভদ্র অসভ্য না।"
-তোমাদের আচরণে আমার মনে হয় আমি তোমাদের ছেলে না আমাকে পুলের নীচ থেকে টোকাই আনছো।
-আহ রাজিয়া তুমি সব সময় আবইয়াজের পেছনে পড়ে থাকো কেনো? আমার ছেলে যথেষ্ট ভালো, আমার ছেলে আমার গর্ব।
-হ্যাঁ আপনি এবার বেশি গর্ব করে ফেলছেন, দেইখেন আবার পেট যেনো না ফুলে।
-আমার কিছুই হবে না তুমি বরং নিজের দিকে খেয়াল রেখো।
খাবার শেষ করতেই ফাইয়াজ বলে উঠলো, আব্বু আমার কিছু টাকা লাগবে।
ফাইয়াজের কথা শেষ হতে না হতেই আবইয়াজ বলে উঠলো আব্বু আমারও লাগবে।
আহনাফ খাঁন কিছু না বলে দুটো চেক লিখে দিলেন।
ফাইয়াজকে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি চেক দিলেন ও আবইয়াজের হাতে অপর চেকটি দিয়ে বললেন টাকার অংক নিজের ইচ্ছানুযায়ী বসিয়ে নিতে।
আহনাফ খাঁনের বরাবরই এমন ব্যবহার খুব অবাক করে ফাইয়াজ কে।
আজ আর নিজের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারলো না সে।
আহনাফ খাঁনের মুখের উপর প্রশ্ন করেই বসলো, আব্বু গত পরশু না ও তোমার অফিসে গিয়ে টাকা নিয়ে আসলো, এতো টাকা কোথায় গেলো সেই প্রশ্ন না করেই আজ আবার তুমি তাকে আনলিমিটেড চেক লিখে দিলে? তাও আবার আমার চেকে সব সময় তুমি নিজেই অংক বসিয়ে দাও কেনো?
মৃদু হাসলেন আহনাফ খাঁন।
"বাড়ির ছোট তো তাই একটু বেশিই টাকা লাগে তার, বন্ধুদের সাথে মজামাস্তি করেই সব উড়িয়ে ফেলে, ছোট'রা এমন হয় ফাইয়াজ।"
"আব্বু আমি নাহয় নিজের জন্য এটা সেটা কিনে আনি আবইয়াজ তো সেটাও করে, তাহলে তার এতো টাকা কোথায় যায়? আমার বেলা তুমি কড়ায়গণ্ডায় প্রতিটি পয়সার হিসেব নাও কিন্তু ওর বেলায় সেটা করতে আমি কখনো দেখি নি তোমায়।"
"তুমি তো ঘরে বসে থাকো তোমার এতো টাকা লাগবে কিসে? আবইয়াজ বাইরে বের হয়, জানোই তো বাইরে গেলে খরচা হয়।"
"কিসের খরচা ওর? জামা কাপড় থেকে শুরু করে ফেসওয়াশ টা পর্যন্ত আমার কেনা, আমার সব সে ইউজ করে।"
"আবইয়াজ ছোট সে তোমার সব কিছু ব্যবহার করতেই পারে, বাসায় সমবয়সী ভাইবোন থাকলে একে অপরের টা ব্যবহার করে এটা এতো বড় করে দেখছো কেনো তুমি? এতো হিংসা কেনো তোমার মনে।"
আহনাফ খাঁনের কথায় চুপ হয়ে গেলো ফাইয়াজ।
উনি বরাবরই আবইয়াজের হয়ে কথা বলেন।
রাজিয়া খাঁন বলে উঠলেন, তুমিই লায় দিয়ে দিয়ে আবইয়াজকে নষ্ট করেছো, যখন যা চেয়েছে সব দিয়েছো, এখনো কি তোমার মনে হয় না আবইয়াজকে একটু মুঠোয় আনা দরকার? ছেলে রাতে বাসায় ফেরে না কোথায় যায় কি করে কিছুই বলে না, গত ৬ বছরে ছয়দিনও বাসায় রাত কাটিয়েছে বলে মনে হয় না।
রাজিয়া খাঁনের কথায় রেগে গেলেন আহনাফ খাঁন।
হুংকার দিয়ে উঠলেন তিনি।
আবইয়াজ নষ্ট হয়েছে হোক, ও ছেলে ও বাইরে যাবে রাত কাটাবে, ছেলে মানুষ এমন হওয়া উচিত যে শহরে দাপিয়ে বেড়াবে। আরেকজনকে তো তুমি মেয়েদের মতো ঘরকুনো বানিয়েছো, সারাক্ষণ রুমের মধ্যে কি করে না করে সে-ই ভালো জানে এর চেয়ে তাকে রান্নাবান্না শেখালেও তো পারো রাজিয়া, অন্তত কাজের মানুষ রেখে এক্সট্রা পয়সা খরচ করতে হতো না।
সুভা তাকিয়ে আছে ফাইয়াজের দিকে।
আহনাফ খাঁনের শেষের কথাগুলো ফাইয়াজের গায়ে কাটার মতো বিঁধলো। সুভার সামনে এমন আচরণে অপমানবোধ করলো সে।
চুপচাপ চেক টি রাজিয়া খাঁনের হাতে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো ফাইয়াজ।
থম মেরে বসে রইলো খাটে।
কিছু মুহুর্ত পর আবইয়াজ এসে ফাইয়াজের পাশে বসলো।
নরমস্বরে বলতে লাগলো, "এসব গায়ে মাখতে নেই, সমস্যাকে যত বড় করে দেখবে সেটা ততই বড় হবে। অপমান যত গায়ে মাখবে সেটা ততই কাটার মতো শরীরের বিঁধবে, এসব মাথায় রাখতে হয় না, মুছে ফেলতে হয়।"
ফাইয়াজ ঝাঁজালো স্বরে বললো, কেনো এসেছিস তুই?
আবইয়াজ মুখে ভেংচি কেটে বললো, একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট নিতে এসেছি।
ফাইয়াজ কর্কশ গলায় বললো, খবরদার আমার একটাও কাপড়ে হাত দিবি না তুই।
"তো তোর কি মনে হয় ফাইয়াজ আমি এখন শুধুমাত্র আন্ডারওয়্যার পরে বেরিয়ে যাবো?"
ফাইয়াজ চিটপটা উত্তর দিলো, "পারলে ওটাও খুলে দিয়ে যা।"
কিন্তু কে শুনে কার কথা। আবইয়াজ কি এসবের তোয়াক্কা করে! ফাইয়াজের কথা কানে না তোলে নিজের মন মতো একটা শার্ট প্যান্ট বেছে নিলো সে।
যাবার সময় পেছন ফিরে বললো, "বুঝেছি তুই টাকা কেনো চেয়েছিস! একটা লাল শাড়ি লাল চুড়ি লাল টিপ আলতা পেটিকোট আর ব্লাউজ কিনবি বলে।"
আবইয়াজ,
দাঁত কটমট করে হুংকার দিয়ে উঠলো ফাইয়াজ।
মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো আবইয়াজ।
-মেঘা।
শর্মিলা বেগমের ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লো মেঘা।
গম্ভীরমুখে প্রশ্ন করলেন।
-কোথায় যাচ্ছো তুমি?
-আমার একটা কাজ আছে আম্মু।
-তুমি সুস্থ নও মেঘা।
-আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
অপাশের উত্তরের অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে গেলো মেঘা।
পেছন থেকে বার কয়েক ডেকে উঠলেন শর্মিলা বেগম।
কিন্তু ওপাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসে নি।
মেয়েটা কিছু না খেয়েই বেরিয়ে গেলো।
রেডি হয়ে বসে আছে আবইয়াজ।
একটু যে বাইরে বের হবে তার জো নেই, বাইক'টাও কাল মাঝপথে ফেলে রেখে এসেছে এতোক্ষণে হয়তোবা কেউ নিয়েও চলে গেছে।
রিফাতের কাছে কল করলো আবইয়াজ।
কল রিসিভ করতেই বলে উঠলো,
-এ মাদ্রিদ কই তুই।
-বাসায় ভাই, জোর বিপদে পড়ে গেছি।
-কেন কি হইছে?
-কাল তোর অনুষ্ঠান ছেড়ে আসার পর থেকে পেট খারাপ। আম্মু এখন কিসের পাতাপুতা এনে দিচ্ছে খাওয়ার জন্য।
-তো খা।
-দোস্ত দেখেই বমি আসছে, খাইতে মন চাচ্ছে না কি করবো?
-মানুষ কতটা আজাইরা হলে এসব নিয়েও চিন্তা করে, খেতে মন না চাইলে খাবি না।(আবইয়াজ)
-না খেলেও সমস্যা, আম্মু মুখের উপর ঠাস ঠাস করে বলে দিবে, বড়লোকের ছেলে। ঘরের এইসব খাবার উনার মুখে রুচবে না, উনি বাইরে খাবেন, বাইরে থেকে পেট পুরে খেয়েও এসেছেন এখন পেট খারাপ, ঔষধি পাতা খাবেন না উনি হসপিটালের সিটে গিয়ে শুয়ে পড়বেন, বাপে কাড়ি কাড়ি টাকা রেখে গেছি উনি আয়েসি জিন্দেগী পার করার জন্য, চরিত্র একদম বাপের মতো বানাইছে। আরো অনেক মহৎ বাণী আছে সেগুলো নাহয় না-ই বললাম।
-তাহলে ব্লগ কর।(আবইয়াজ)
-মানে?(রিফাত)
-ক্যামেরা অন করে ব্লগ করে করে খা, দেখবি অখাদ্য জিনিসও খেতে খুব ভালো লাগছে, ইয়াম্মি ইয়াম্মি বলে চেটেপুটে খাবি, তোর ফোকাস থাকবে শুধু ক্যামেরার দিকে। মাথায় এটা রাখবি ব্লগ টা যেনো ভালো হয়। কি খাচ্ছি না খাচ্ছি এগুলো ব্যাপার না।
-তাহলে শুরু করে দেই?
-হ্যাঁ শুরু কর। তোর এসব পাতাপুতা খাওয়া শেষ হলে বাইক নিয়ে আসিস।
-বললাম না পেটে সমস্যা, যদি মাঝপথে ইয়ে হয়ে যায়।
-ফোন রাখ হারামজাদা।
কল কেটে দিয়ে ব্লগ করার জন্য উঠে দাঁড়ালো রিফাত।
-হ্যালো গাইস, ওয়েলকাম বেক টু মাই আজাইরা চ্যানেল।
তো আজকে আমার এই ভিডিওতে থাকছে অনেক অনেক ট্রিকস জানতে হলে স্কিপ না করে শেষ পর্যন্ত দেখুন।
তো গাইস আমি এখন চলে যাচ্ছি ডেড'স রেস্টুরেন্টে, সেখানে গিয়ে কি কি খেলাম, খাবারের টেস্ট কেমন তাদের সার্ভিস কেমন সব কিছুই থাকছে আজকের এই ভিডিওতে।
তো গাইস এই যে আমি চলে এসেছি, এখানে আবার শুনেছি ফ্রী'তে খেতে পাওয়া যায়, ওহে ওটা শুধুমাত্র আমার জন্য, আপনাদের জন্য না।
ক্যামেরা ধরে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো রিফাত।
ওয়েটার ওয়েটার বলে জোরে জোরে চেল্লাতে লাগলো সে।
গাইস এখানের সার্ভিস খুব বাজে, ডেকে ডেকে গলা ফাটিয়ে ফেলছি তাও ওয়েটারের দেখা নেই।
রেস্টুরেন্ট মালিকের কাছে নালিশ করা উচিত।
আজ এই এই রেস্টুরেন্টের বেড রিভিউ দিয়েই ছাড়বো, কতবড় সাহস আমার মতো এতো বড় সেলিব্রিটিকে পাত্তা দেয় না।
হঠাৎ চেয়ার'টা নড়ে উঠলো।
-গাইস রেস্টুরেন্টের ভেতর ভূমিকম্প হচ্ছে।
আকস্মিক মাথায় আঘাত লাগলো।
আল্লাহ বিল্ডিং ভেঙে মনে হয় আমার মাথায় পড়ে গেছে।
কথা'টা বলতে বলতে পেছনের দিকে তাকালো রিফাত।
তার একদম পেছনে ঝাড়ু হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মাহফুজা বেগম।
[গল্পের কোথাও খাপছাড়া লাগলে কমেন্টে জানান আমি পরিবর্তন পরিবর্ধন করে নিবো সাথে পর্ব সংখ্যা ও এড করে দিবেন তাতে আমার সুবিধা হবে। আর যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সেটা নিয়েও একলাইন বলে যান।]
চলবে,,,,
picture art: Mumtas Chowdhury