লঞ্চে চড়া আর নদীর মাঝখানে নতুন এক অভিজ্ঞতা

এটি সম্পূর্ণ আমার নিজের অভিজ্ঞতা। কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। ধন্যবাদ।

খুলনার বাসস্ট্যান্ড থেইকা রিকশা কইরা লঞ্চ ঘাটে গেলাম। তখন দুপুর ২টার মতো বাজে। রোদটা একটু তেজি হইছিল, কিন্তু নদীর পাড়ে দাঁড়াইয়া হাওয়ার ঝাপটা গায়ে লাগতেছিল জাদুর মত। ঘাটে মানুষের ভিড়, কেউ মালামাল উঠায়, কেউ টিকিট চেক করে। আমাদের লঞ্চটা নাম “সুন্দরবন সোনারতরী” — নামটা শুনলেই মনটা খুশিতে ভইরা যায়।

 

আম্মা বললেন, “এই লঞ্চই নাকি সুন্দরবনের ভিতর নিয়া যাইবো?” আব্বা হাসি মুখে বলল, “হ, এইটাই। আর ২ দিন এই লঞ্চেই থাকমু, খামু, ঘুমামু, আর ভ্রমণ করমু।” ছোট ভাই আনন্দে লাফাইয়া বললো, “ইহ! ইট্টুক জায়গায় থাকুম দুইদিন?” আমরা হেই কথা শুনে হাসতে লাগলাম।

 

লঞ্চে উঠার সময় একটু জাহাজ টাইপ অনুভূতি হইলো। নিচে মালপত্র রাখার জায়গা, মাঝখানে সিট, ওপরে ছাদ—খুব গোছানো পরিবেশ। আমরা একটা রুম পাইছি, ছোট একটা বেড, একটা টেবিল, আর একটা জানালা। জানালার ফাঁক দিয়া দেখতাছি নদীর পানি, আর তার ওপাশে ঘন গাছপালা।

 

লঞ্চ ছাড়ল বিকাল ৩টার দিকে। হুইসেল বাজাইয়া ধীরে ধীরে সামনে আগাইতেছে। চারপাশে শুধু পানি, মাঝে মাঝে ছোট নৌকা বা ট্রলার দেখা যায়। নদীর পাড়ে পাখিরা উড়ে বেড়ায়, কিছু জেলে জাল ফালাইতেছে। সেই দৃশ্য এত শান্ত, এত নিরিবিলি, মনে হইতেছিল যেনো সিনেমার দৃশ্য।

 

আমরা ছাদে চইলা গেলাম। হাওয়ার গতি বেড়েছে, চুল উড়তেছে, চোখ বন্ধ করলে মনে হয় — পৃথিবীর সব চিন্তা বাইর ফালাইয়া দিছি। আব্বা ক্যামেরা বাইর করল, আমি আর ভাই পোজ দিলাম। পিছনে নদী, সামনে আকাশ – আর মাঝে আমরা। সেই ছবি আজও আমার মোবাইলের ওয়ালপেপারে আছে।

 

লঞ্চের ক্যান্টিনে বিকালে চা আর পাউরুটি দিলো। চা খাইতে খাইতে সবাই গল্প করতেছিল, গাইড ভাই সুন্দরবন নিয়া নানা গল্প শোনাইল — “এই বনে সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণী বাঘ, তবে হরিণ, কুমির আর বানরও আছে।” শুনে ছোট ভাই একটু চিন্তিত মুখে কইল, “আম্মা, কুমির যদি উঠে আসে!” আম্মা বলল, “কিচ্ছু হইব না, আমরা তো জঙ্গলের ভিতর নামুম না, শুধু দেইখা আসুম।”

 

বিকালের শেষ আলো যখন নদীতে পড়তেছিল, সেই রঙ বদলানো পানির দিকে তাকায়া মনটা অদ্ভুত শান্ত হইয়া গেল।


Hridoy Sarker

85 blog messaggi

Commenti