রাইতে ঘুমটা ভালোই হইছিল। নদীর দুলুনি আর ঠান্ডা বাতাসে মনে হইছিল খাট না, মায়ের কোল। ভোরবেলা চোখ খুইলা দেখি, জানালার বাইর দিয়া একরাশ লাল আলো ঢুকতেছে ঘরের ভিতরে। আমি চুপচাপ উঠা গেলাম, দেখলাম আব্বা আগে থেইকাই ছাদে গিয়া বসা।
আমি গিয়া দাঁড়াইয়া দেখি – সামনে নদীর ওপারে ঘন বন। গায়ে হালকা কুয়াশা, মাঝখানে সূর্য উঠতেছে। সেই দৃশ্য আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর কিছু। নদীর পানি লালচে রঙ ধইরা নিঃশব্দে বইতেছে, আর পাখির ডাক মিলায়া দিতেছে এক অপরূপ সুর।
আম্মা উঠে বলল, “এই যে নতুন দিন শুরু হইল, সবাই ফ্রেশ হইয়া চা খাইয়া লই।” গাইড ভাই ততক্ষণে আমাদের ডাক দিছে, “আজকে সকালের পরেই আমরা সুন্দরবনের ভিতরে ঢুকব, সবাই তৈরি থাকেন।”
নাস্তা আইলো – সাদা রুটি, ডিম, কলা আর গরম চা। নদীর মাঝখানে এই সাধাসিধা নাস্তা খাইয়া মনে হইলো, শহরের হোটেলের খাবারে এত তৃপ্তি কোনদিন পাই নাই। সবাই চুপচাপ খাইতাছি আর নদীর দিক তাকাইতাছি। ছোট ভাই বলল, “এইটা সুন্দরবনের গন্ধ ভাইয়া?” আমি কইলাম, “হ, জঙ্গলের গন্ধ। আরেকটু পরেই গাছের নিচ দিয়া যামু।”
লঞ্চ ধীরে ধীরে গভীর বনের দিকে আগাইতেছিল। দুপাশে ঘন গাছ, মাঝে মাঝে বাঁশের মত লম্বা লম্বা গাছ দেখা যায়। গাইড ভাই কইল, “এইবার আমরা কচিখালী জোনের দিকে যাচ্ছি, এইখানে হরিণ বেশি দেখা যায়।”
আব্বা ক্যামেরা রেডি কইরা রাখতাছে, আম্মা ছোট ভাইরে বারবার সাবধান কইরা দিতাছে – “বাহিরে ঝুঁকবি না, বাঘ আছে কিনা কনো ঠিক নাই।” আমরা হাইসা উঠি, কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা কেমন থ্রিল কাজ করতেছিল।
একটু পর আমাদের জানাইল, আর আধা ঘণ্টা পরই একটা ছোট খাল দিয়া ভিতরে নামা লাগবো, সবাই লাইফ জ্যাকেট পরো।
আমার ভিতরে ভিতরে ধুকপুকানি বাড়তেছিল। সামনে জীবনের প্রথম বনভ্রমণ, যেখানে বাঘও থাকতে পারে, আর যেখানে প্রকৃতির সাথে মুখোমুখি হওয়ার সময় শুরু হইতেছে।