ঈদের গরুর হাটের হইচই: একদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা

আমার নিজের অভিজ্ঞতা এইডা। কেও কপি কইরা নিজেদের আইডিতে পোস্ট কইরেন না । ধন্যবাদ।

প্রতিবছর ঈদুল আজহা আসলেই গরুর হাট মানেই আলাদা উত্তেজনা, আনন্দ আর কৌতূহলের এক অদ্ভুত মিশেল। আমাদের এলাকায় যেই হাটটা বসে, নাম তার মুক্তাগাছা গরুর হাট। এই হাটে যাইতে হলে মন আর পকেট দুইটাই বেশ জোরালো রাখতে হয়! এবছর আমাগো পরিবারের দায়িত্ব পড়ল গরু কিনার। আব্বা আর বড় ভাইর লগে আমি, সকাল সকাল রওনা দিলাম।

 

সকালের হাট মানেই তুলনামূলক কম ভিড়। ঘর থেইকা বাইর হইলাম প্রায় সাতটার দিকে। রাস্তায় তখনও হালকা কুয়াশা টিকে আছিল। কিন্তু হাটের গেইটে যাইতেই দেখলাম গেটের বাইর থেইকাই রীতিমতো মানুষের ঢল! কেউ গরু নিয়া ঢুকতাছে, কেউ গরু দেইখা দর কষতাছে। গেটের একপাশে সারি সারি ট্রাক থুইয়া আছে, যেইখান থেইকা গরু নামতাছে একটার পর একটা। সেই আওয়াজ – ‘হাট্টি হাট্টি’, ‘চালাও গরু’, ‘দাম কইতাছে কত্ত!’ – মনে হইতাছে যেন একটা যাত্রাপালার মঞ্চ!

 

ভেতরে ঢুইকা দেখলাম হাট কয়েকটা ভাগে ভাগ কইরা রাখছে – দেশি গরুর অংশ, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, আবার অনেকে নাম দিছে “রাজা গরু”, “টাইগার গরু” এইসব নামে। ছোট ভাইরে ফোনে ভিডিও কল দিয়া দেহাইলাম। সে তো খুশিতে লাফাইতাছে! একটা গরু দেখাইলাম, মাথায় সাদা ফাঁটা, কানে লাল দাগ – ও বলল, “এইটাই নিও ভাইয়া, এইডা আইলাহি দান হইব!”

 

গরুর দামদর শুরু হইল। যেই গরুটারে পছন্দ করছি, সেইটার দাম প্রথমে বলল এক লাখ ত্রিশ হাজার। আব্বা হাল্কা হাসি দিয়া বলল, “ভাই, এই গরুতে কি সোনা লাগাইছেন?” হাটের ব্যাপারীও কম যায় না – সে বলে, “চাচা, দেহেন গরুর দাঁত, ওজন, হাইট – এইডা নেয়া মানে ঈদের কোরবানিতেও ফার্স্ট প্রাইজ!”

 

শেষমেশ অনেক দর কষাকষির পর ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় গরুটারে কিনলাম। গরু নিয়া ঘরে ফেরার সময় আশেপাশের ছোট ছোট বাচ্চারা গরুর লগে ছবি তুলতাছে। রাস্তায় মানুষ তাকায়া বলতাছে, “ভাই, মাইরলা গরু বাইচ্চা আনছেন!” আমরা গর্বে বুক ফুলাইয়া হাঁটতাছি।

 

গরুর লগে গা ধুইয়া খাওয়াইলাম, ঘাস দিয়া তারে খুশি কইরা রাখলাম। ছোট ভাই তো ওর নাম রাখল “বাদশা”। আম্মাও খুশি, কারণ গরুটা শান্ত স্বভাবের। গরু হাট থেইকা আইসা মনে হইতাছে, যেন এক যুদ্ধ জয় কইরা আইলাম।

 

ঈদের গরুর হাট মানে শুধু গরু কিনা না, এইটা একটা মেলা, একটা উৎসব, একটা রীতিমতো পারিবারিক অভিযান। দরদাম করা, গরু দেখা, মানুষে মানুষে গল্প – এইসব মিলাইয়া ঈদের আগে একটা ভিন্নধরনের আনন্দ পাওয়া যায়।

 

এইবার বুঝলাম, গরু হাটে যাওয়া মানেই শুধু কেনাকাটা না, বরং স্মৃতি তৈরি, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে সময় কাটানো, আর কিছু মজার গল্প সঞ্চয়ের সুযোগ। এমন অভিজ্ঞতা বছরে একবার হয়, কিন্তু মন চাইলে সারাবছর এই স্মৃতি নিয়া হাসা যায়।


Hridoy Sarker

85 Blog Mesajları

Yorumlar