কিছুদিন পরের কথা। রুবায়া দেশে ফিরে এলো। বাড়ি ফিরেই সে গেল সোলায়মানের বাসায়। সোলায়মান তাঁকে সমাদর করে শরবত, নাস্তা খেতে দিল। খেতে খেতে রুবায়া বলল, ‘বিশ্বাস করুণ, নির্দিষ্ট দিনে আপনার পাওনা ফিরিয়ে দিতে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন জাহাজ না পাওয়ায় সময়মত ফিরে আসতে পারিনি। এই নিন আপনার স্বর্ণমুদ্রা। আমাকে দেনার দায় থেকে মুক্তি দিন।’ রুবায়া স্বর্ণমুদ্রার থলে সোলায়মানের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
সোলায়মান বলল, ‘এক পাওনা আমি কয়বার নেবো? নির্দিষ্ট দিনেই আমি আপনার পাঠানো স্বর্ণমুদ্রা ও চিঠি পেয়েছি। আমি আল্লাহর শোকর করছি এ জন্য যে, প্রকৃত ঈমানদারকে আল্লাহ এভাবেই সহায়তা করেন।’ রুবায়াও আল্লাহর শোকর আদায় করে খুশি মনে বাড়ির পথ ধরলো।
তীরে দাঁড়িয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ‘হে আল্লাহ, তুমি জানো আমি সোলায়মানের কাছ থেকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার নিয়েছি। সে জামিন চাইলে আমি তোমাকেই জামিন মেনেছিলাম। নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি যাওয়ার জন্য আমি কোন যানবাহন পাচ্ছি না। তাই তোমার ওপর ভরসা করে স্বর্ণমুদ্রা ভরা এই কাঠের টুকরাটি সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছি। তুমি সময়মত এটি তাঁর হাতে পৌঁছে দিও।’
রুবায়া এ কথা বলে কাঠের খন্ডটি সমুদ্রে ফেলে দিল। এরপর সে আবার বাড়ি ফেরার যানবাহন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
এদিকে নির্দিষ্ট দিনে সোলায়মান বন্দরে এসে রুবায়াকে তালাশ করলো। তাঁকে না পেয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফেরার পথে সমুদ্র তীরে একখন্ড কাঠ দেখতে পেলো। কাঠটি রান্নার কাজে লাগবে ভেবে সে ওটা নিয়ে বাড়ি ফিরল। কুড়াল দিয়ে কাঠটি কাটতে গেলে বেরিয়ে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও চিঠি। সোলায়মান চিঠিটা পড়লো। জানতে পারলো রুবায়া তাঁর জন্যই এ স্বর্ণমুদ্রা গুলো পাঠিয়েছে।
এ কথা বলে রুবায়াকে সোলায়মান এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার দিল। যথাসময়ে জাহাজে চড়ে বিদেশে পাড়ি জমালো রুবায়া। বন্দরে বন্দরে ব্যবসা করে প্রচুর লাভ করলো। ব্যস্ততাঁর মধ্য দিয়ে কেটে গেল প্রায় পুরোটা বছর। স্বর্ণমুদ্রা ফেরত দেয়ার দিন ঘনিয়ে এলো। বাড়ি ফেরার জন্য বন্দরে এলো রুবায়া। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফেরার মত কোন জাহাজ পেলো না। জলপথ ছেড়ে স্থলপথে বাড়ি ফিরতে চাইল, কিন্তু কোন যানবাহন জোগাড় করতে পারল না। অনেক চেষ্টা করেও সে যখন দেখলো সময় মত ফেরার কোন উপায় নেই তখন ওয়াদাভঙ্গের আশংকায় সে অস্থির হুয়ে পড়লো। কি করা যায় ভাবতে গিয়ে তাঁর মাথায় এক অভিনব বুদ্ধি এলো। রুবায়া একটুকরো কাঠ ছিদ্র করে তাতে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও একটি চিঠি ভরলো। এরপর শক্ত করে ছিদ্রমুখ বন্ধ করে সে গেল সাগর পাড়ে।
পরদিন সকালে সে সোলায়মানের বাড়ি গিয়ে হাজির হলো। সালাম বিনিময়ের পর সোলায়মান তাঁর আগমনের কারণ জানতে চাইলেন। রুবায়া বলল, ‘বাণিজ্যে যাচ্ছি, মালামাল কেনার জন্য আরো কিছু স্বর্ণমুদ্রা দরকার। আপনি যদি একহাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার দেন তবে এক বছর পর তা শোধ করে দেবো।’
সোলায়মান বললেন, ‘ধার দিতে সমস্যা নেই, তবে জামিনদার দরকার।’
রুবায়া বলল, ‘আমার জামিনের জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট।’
রুবায়া যেমন পাক্কা ঈমানদার, সোলায়মানও তাই। রুবায়ার কথা শুনে বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, আল্লাহই জামিনের জন্য যথেষ্ট।’
ا
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
গত কাল মৌরিতানিয়ার হজ্জ্ব যাত্রীদের বিমান দুর্ঘটনা
লোহিত সাগরের তীরে, পবিত্র মক্কায় যাওয়ার পথে, বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২১০ জনেরও বেশি হজ্জযাত্রী শাহাদাত বরণ করেন।
আল্লাহ পাক তাদের সবাইকে জান্নাত বাসী করুন!! আমিন🤲 #hlightseveryone #shahalambabu
ঈমানের জোর: শিশুতোষ ইসলামিক গল্প ২!
স্বর্ণমুদ্রা। ছবি: কাল্পনিক।
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগের কথা। তখন মানুষ আল্লাহর নবীদের কথা মেনে চলতো। মানুষ সত্য কথা বলতো। ওয়াদা পালন করতো। বনি ইসরাঈলের এমনি এক লোক বাস করতো। নাম রুবায়া। সে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতো আর বন্দরে বন্দরে ব্যবসা করতো। একবার বাণিজ্যের যাবার আগে কিছু স্বর্ণমুদ্রার টান পড়লো। ভেবে দেখলো, কারো কাছ থেকে ধার নেয়া ছাড়া গতি নেই। তখনি তাঁর মনে পড়লো উদার হৃদয় সোলায়মানের কথা।
তাঁর কথা শুনে হাসলেন নবী। বললেন, ‘যে মেহনত করে খায় আল্লাহই তাঁকে সাহায্য করেন।’ তাইতো কবি বলেনঃ ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।’
এই ঘটনা আমাদের বলে, জীবনে উন্নতি করতে চাইলে পরিশ্রমী হও, জীবনকে সফল করতে চাইলে পরিশ্রমী হও। যে পরিশ্রমী নয় সে অলস, সে কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন কবি চমৎকার ভাবে এ কথাটিই বলেছেন তাঁর কবিতায়। তিনি বলেনঃ
পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ, আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ।
Suraiya Soha
Slet kommentar
Er du sikker på, at du vil slette denne kommentar?