স্থসরাঈল সেলজুকীর বার্তা শুনে সুলতান হেসে বললেন- আমি বিশ্বাস করি, ইসরাঈল সেলজুকীর শক্তি ও সাহস উভয়টিই আছে। কিন্তু বৃদ্ধি কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তিনি দূতের উদ্দেশ্যে বললেন, তুমি গিয়ে ইসরাঈল সেলজুকীকে বলবে, আমি তাকেও দুর্বল ভাবছি না, নিজেকেও দুর্বল মনে করছি না। আমি আসলে এই অঞ্চলে একটা শান্তিময় স্থিতিশীল পরিবেশ চাই। কারণ আমাদের পারস্পরিক লড়াইয়ে কাফের ও বেঈমানেরাই শক্তিশালী হবে।
ইসরাঈল সেলজুকীকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, এখন আমি হিন্দুস্তান যাচ্ছি। সে যেন আমার আসার জন্যে অপেক্ষা করে। আমি তাকে তার এলাকায় সবচেয়ে প্রভাবশালী বলেই মনে করি। তবে আমার অবর্তমানে যেন গযনীর বিরুদ্ধে কোন তৎপরতা না চালানো হয়।
এ পর্যায়ে সুলতান মাহমূদ শংকাবোধ করছিলেন, ইসরাঈল সেলজুকী না আবার তার অবর্তমানে গযনী আক্রমণ করে বসে। কারণ? তিনি জানতেন, সেলজুকীরা এমন শক্তি অর্জন করেছে, তারা ইচ্ছা করলে যে কোন ছোট রাজ্যের শাসককে তরবারী দেখিয়ে শর্ত মানতে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে।
এই প্রেক্ষিতে সুলতান মাহমূদ ইসরাঈল সেলজুকীর দূতকে একটি সবুজ-শ্যামল এলাকা দেখিয়ে বললেন, এই এলাকাটি সেলজুকীদের দেয়া হবে
এই প্রেক্ষিতে সুলতান মাহমূদ ইসরাঈল সেলজুকীর দূতকে একটি সবুজ-শ্যামল এলাকা দেখিয়ে বললেন, এই এলাকাটি সেলজুকীদের দেয়া হবে এবং সেলজুকীদের সব শর্তই মানা হবে।
ইসরাঈল সেলজুকীর দূত ফিরে গিয়ে সেলজুকীকে সুলতানের বক্তব্য জানালে সে সুলতানের ফিরে আসার জন্যে অপেক্ষা করতে সম্মতি প্রকাশ করলো।
...
১০২৩ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। সুলতান মাহমুদ এমন ক্ষিপ্রগতিতে ভারতে প্রবেশ করলেন যে, আজো তার সেনাদের গতির ব্যাপারটি নিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞগণ বিস্ময় প্রকাশ করেন। গযনী বাহিনী যে গতিতে কালাঞ্জরে পৌঁছেছিল, তখনকার পথ-ঘাট, গযনী থেকে কালাজরের দূরত্ব বিবেচনায় তা অসম্ভব মনে হয়। তখনকার সেনাবাহিনীর গঠন ও পথঘাটের অবস্থা বিবেচনায় যেকোন সফর ছিলো কঠিন ও দুর্গম। এছাড়াও পথিমধ্যে নদী-পাহাড়-জঙ্গল আরো কতো শত বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে গোয়ালিয়র হয়ে যে বিদ্যুৎগতিতে সুলতান মাহমুদ কালা রে পৌছেন তা ছিল এক অপার বিস্ময়।
ভারত অভিযান (৫)-৯
ভারত অভিযান ১২৯
২৮
2025/05/25 10:36
তাকিয়ে থাকি। আহা। মরার পর যার আত্মা পাপিষ্ঠ হবে, জীবন্ত অবস্থায়ই তা নরকে জ্বলতে শুরু করেছে।
হঠাৎ রাজিয়া রূপী রত্না বলতে লাগল- হ্যাঁ, ঋষি বাবা। আমি সত্যিকার অর্থেই পাপি। আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করেছি। এক লোক আমার অন্তরকে জয় করে নিয়েছিল। ভালোবাসার টানে আমি ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করি। কিন্তু আমার ধর্মকে আমি ভুলতে পারিনি। আমি আসলে কিছুই জানি না সাধু বাবা। আমি একটা মূর্খ। আমাকে এই নরক থেকে বাঁচার পথ দেখান।
কিন্তু যে পাপ তুমি করে ফেলেছো, এর শাস্তি থেকে তুমি কিভাবে মুক্তি
পাবে?
কিভাবে এই পাপ থেকে বাঁচতে পারবো, সে কথা আপনি বলে দিন ঋষি বাবা। আপনি অবশ্যই সেই পথের খবর রাখেন। আত্মাকে পাপের শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্যে আমি জীবন্ত চিতায় শুতেও রাজি আছি। পরজনমের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্যে আমি নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও রাজি।
কি বলবো, বলতেও ভয় করে। তোমার যদি সাহস থাকে তবে শোন। পানি থেকে সব সময় দূরে থাকবে। তোমাকে একটি জীবনের বলিদান করতে হবে।
ন ৪০
গেলেন।
এ ক্ষেত্রে আমি ভিন্ন কোন চাল দিতে চাচ্ছিলাম, সেটি করার সুযোগ আমার হয়নি- বললো মহারাজা তরলোচনপাল। আমি গযনী বাহিনীর উপর পেছন থেকে আক্রমণ করতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু কোন জায়গাতেই দীর্ঘ সময় মোকাবেলা করতে পারেনি আমাদের কোন সহযোগী বাহিনী। মাহমূদ বলতে গেলে প্রতিদিনই আমাদের একেকটি দুর্গ জয় করে নিয়েছে। কন্নৌজে তো কোন মোকাবেলাই হয়নি। রাজা রাজ্যপাল আগেই রাজধানী ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমিতো শত্রুবাহিনীর পিঠ দেখারই সুযোগ পাইনি।
তরলোচনপাল! বললো মহারাজা গোবিন্দ। আপনার এই চাল আমার
মোটেও পছন্দ হয়নি। আপনি যদি আপনার সৈন্যদের গযনী বাহিনীর আগমন পথে নিয়ে আসতেন, তাহলে আর এরা এতো সহজে অগ্রসর হতে পারতো না। তখন পরিস্থিতি ভিন্নতর হতো।
মহারাজা তরলোচনপালের চাল আমি বুঝতে পেরেছি- বললো পুরোহিত। তিনি তার বাহিনীকে লাহোর থেকে এজন্য বাইরে নিয়ে গিছেন, যাতে তার
থেকেই সেখানে উপস্থিত গোবিন্দ নামের এক বুদ্ধিজীবী সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো-
আপনারা শান্ত হোন। আপনাদের মতো মহারাজাদের পক্ষে সুলতান মাহমুদকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। আপনারা মাহমুদের কিছুই করতে পারলেন ন।
সবাই শুনুন! আমি যা জানি আপনারা কেউ তা জানেন না। আপনারাই তো আমার বিদ্যা বুদ্ধির প্রশংসা করেন। আপনারা জেনে অবাক হবেন, কল্লৌজের বর্তমান গভর্নর আব্দুল কাদের সেলজুকীর সাথে আমার যে পরিমাণ হৃদ্যতা আছে এমন হৃদ্যতা তার সেনাবাহিনীর কারো সঙ্গেও তার নেই। সে আমাকে তার বিশ্বস্ত গোয়েন্দা মনে করে, অথচ তার বুকের ভেতর থেকে কথা বের করে আজ আমি আপনাদের সামনে রাখছি। আমিই বর্তমানে কন্নৌজে আপনাদের চোখ আপনাদের কান। আমি যে কথাগুলো বলছি, আপনারা পারস্পরিক মতভেদ ভুলে আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
গোবিন্দের মুখে একথা শুনে সবাই কথাবলা বন্ধ করে তার দিকে মনোযোগী হলো। আসলেই উপস্থিত মহারাজাদের সবাই গোবিন্দের যোগ্যতার
2025/05/25 10:31
Enter text
ভারত অনিয়ান
৩০
লড়াই করানো আপনার সাধ্যের ব্যাপার নয় পণ্ডিত মহারাজ। বললো মহারাজা গোবিন্দ। এ ব্যাপারে আপনার চিন্তার চেয়ে আমাদের চিন্তা আরো গভীর। আমাদের সাময়িক কোন বিজয়ের ব্যবস্থা করলেই চলবে না, চিরদিনের জন্যে মাহমুদের শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে হবে।
আমাদেরকে ভাবতে হবে সবাই মিলে কিভাবে গযনী দখল করা যায়। আমাদের এই প্লাবনের উৎস বন্ধ করতে হবে নয়তো কিছুদিন তা থেমে থাকার পর আবার এই প্লাবন আমাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনাদের পক্ষে গযনী দখল করা সম্ভব নয় মহারাজ। বললো পুরোহিত। লাহোরের মহারাজা তরলোচনপাল এখানে আছেন, তারা দাদা মহারাজা জয়পাল গযনীর উপর কতোবার আক্রমণ করেছেন, কিন্তু তার পরিণতি কি হয়েছে আপনারা সবাই জানেন। এই প্রেক্ষিতে আমি তরলোচনপালকে জিজ্ঞেস করতে চাই, গযনী বাহিনী মথুরাকে এভাবে লন্ডভন্ড করে জনমানবহীন করে ফেলল, বুলন্দশহর মুনাজকে ধ্বংস করে দিল, এখন কন্নৌজকেও ধ্বংস করে দিয়েছে, লাহোরের মহারাজা এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? তিনি কোথায় জানি তার সৈন্যদেরকে লুকিয়ে রাখলেন আর অন্যদেরকে লড়াই করতে উস্কানি দিয়ে গেলেন।
এ ক্ষেত্রে আমি ভিন্ন কোন চাল দিতে চাচ্ছিলাম, সেটি করার সুযোগ আমার
পুরোহিতের কথা শুনে তরলোচনপাল ক্ষোভে অপমানে চিৎকার করে বললো- এসব কথা বলে আমাকে অপমান করা হচ্ছে; এমন অপমান বরদাশত করা হবে না।
তরলোচনপালের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে পুরোহিত বললো, ঠিক আছে মহারাজ। আমি শুধু বিষয়টির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার জন্যে কথাটি বলেছিলাম। আপনাকে অপমান করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এতে যদি লাহোরের মহারাজা অপমানবোধ করে থাকেন তবে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
কিন্তু লাহোরের সেনাবাহিনীকে আপনি খুব শীঘ্রই সম্মুখ সমরে নিয়ে আসবেন এবং শত্রুর মুখোমুখি সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে ঘোষণা করবেন, আপনি গমনীর বশ্যতা স্বীকার করেন না এবং গযনীর সাথে আপনার পূর্ব পুরুষের কৃত মৈত্রীচুক্তি আপনি প্রত্যাখ্যান করবেন।
প্রথমে তিন মহারাজার এই সম্মিলন ছিল একটি ঘরোয়া বৈঠকের মতো। বৈঠকী মেজাজেই কথাবার্তা হচ্ছিল। কিন্তু রাণী শকুন্তলার বিবস্ত্র হয়ে মহারাজাদের উত্তেজিত ও অপমানিত করার পর মহারাজাদের এই বৈঠক হট্টগোলের রূপ ধারণ করে। আর পুরোহিতের উস্কানির পর সবাই এক সাথে উত্তেজিত কথা বলার কারণে রীতিমতো হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বৈঠকের শুরু থেকেই সেখানে উপস্থিত গোবিন্দ নামের এক বুদ্ধিজীবী সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো-
আপনারা শান্ত হোন। আপনাদের মতো মহারাজাদের পক্ষে
এতোটাই সন্তোষজনক যে, এ পর্যন্ত শ'খানেক হিন্দু সৈনিক ইসলাম গ্রহণ করেছে। হিন্দুদের অনেক কুমারী মেয়েও ইসলাম গ্রহণ করেছে।
রাজা রাজ্যপালের পুত্র লক্ষণপালও রাড়ীতেই অবস্থান করছে। লক্ষণপাল খুবই পেরেশান। সে মনে মনে মুসলমানদের প্রতি খুবই ক্ষুব্ধ। কিন্তু তার বাবা মুসলমানদের অধীনতা মেনে নেয়ার কারণে তার পক্ষে বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। সে আমাকে একথাও বলেছে, সুযোগ পেলে সে তার বাবাকে হত্যা করে হলেও মুসলিম অধীনতা থেকে মুক্তি লাভ করবে। কিন্তু সে ভয় পায় গযনী বাহিনীর প্রতিশোধকে। কারণ রাজা গযনী বাহিনীর মিত্র। কোন অবস্থাতেই রাজা গযনী শাসকদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না। রাজার কথা হলো, সম্মুখ সমরে কোন হিন্দুর পক্ষেই গযনী বাহিনীকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। চক্রান্ত করেও গযনী বাহিনীকে পরাস্ত করা অসম্ভব। তাদের অধীনতা মেনে নিয়ে আমি যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো আছি। অকারণে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন বিপর্যয় ডেকে আনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
আমি বর্তমানে ভেতরের অবস্থা যতটুকু জানি; তাতে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌছেছি যে, রাজ্যপালকে অতি গোপনে হত্যা করতে পারলে হয়তো রাড়ীতে গযনী বিরোধী একটা পরিবেশ তৈরী করা যাবে। তবে এই হত্যা কাণ্ড এমন সংগোপনে ঘটাতে হবে যাতে গযনী বাহিনীর কোন সন্দেহ করার অবকাশ না
করছিল না, সে অর্থের লোভে দ্বিমুখী চরিত্র ধারণ করে দু'হাতে কাড়ি কাড়ি পয়সা কামাতে ব্যস্ত ছিল। হিন্দু মুসলিম কেউ গোবিন্দের এই দ্বিমুখী চেহারা আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই নির্বিঘ্নে গোবিন্দ তার চাতুর্যপূর্ণ কৌশল কাজে লাগিয়ে হিন্দু মুসলিম উভয় শাসকদের আস্থাভাজন রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলো।
এবার সে মহারাজাদের বৈঠকে তাদেরকে বলল, আপনাদেরকে প্রথমেই এই পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে যে, কন্নৌজে মাত্র এক হাজার গযনী সৈন্য রয়েছে বিধায় সেখানে আক্রমণ করা উচিত। আমি বলছি, আপনাদেরকে এই পরিকল্পপনা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, রাজ্যপালের বর্তমান রাজধানী রাড়ীকে গযনীর সেনারা ক্যাম্প বানিয়ে ফেলেছে। রাড়ীতে এখন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
কন্নৌজ থেকে যেসব হিন্দু পরিবার পালিয়ে গিয়েছিল, তারা এখন রাড়ীতে এসে বসতি স্থাপন করেছে। রাজ্যপালের যে সব সৈন্য রাড়ীতে রয়েছে তাদেরকে গযনীর সেনা কমান্ডাররা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গযনীর সেনাদের আচার