ভগ্নপুরানের ডাক
শহরের এক প্রাচীন বাজারের শেষপ্রান্তে একটি ভগ্নপ্রায় বাড়ি ছিল, যেখানে বহু বছর ধরে কেউ বাস করত না। বাড়িটির এক কোণে একটা ছোট্ট ঘর, যেটার দরজা সবসময় খোলা থাকত। লোকমুখে শোনা যেত, ওই ঘর থেকে মাঝে মাঝে ভঙ্গুর পুরোনো কোনো ডাকে শোনা যায়—যা শুনলেই অদ্ভুত এক থরথরানি শরীর ছুঁয়ে যায়।
রহিম, তরুণ একজন ছাত্র, ওই ভয়ংকর গল্প শুনে কৌতূহলবশত রাতে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সন্ধ্যার পর সে বাজারের গোধূলির আলোর মাঝেই সেই বাড়ির কাছে পৌঁছল। বাড়িটা দেখতে পুরনো, দেয়ালে ছোপ ছোপ কালো ছোপ, আর ভেতর থেকে গন্ধ উঠছিল মাটির মিশ্রিত ধুলোয়ের।
রহিম ধীরে ধীরে সেই ঘরের ভেতরে ঢুকল। ঘরটা অন্ধকার, কিন্তু দেয়ালে ঝলমলে একটি মোটা বই রাখা ছিল। বই খুলতেই ধুলো উঠল আর এক অদ্ভুত গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল। বইয়ের পাতায় কিছু লেখা ছিল, কিন্তু সেটা বোধগম্য নয়, যেন কোনো প্রাচীন ভাষায় লেখা।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের তাপমাত্রা হঠাৎ কমতে লাগল। হঠাৎ একটি ফিসফিসানি শব্দ কানে এল, “আসো… অপেক্ষা করছি…” রহিমের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। সে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু দরজাটা যেন নিজেরাই বন্ধ হয়ে গেল।
ঘরের ভেতর এক একটা বাতাসের ঝাপটা এল, যা যেন তাকে টেনে নিচ্ছে, কোনো অদৃশ্য শক্তি। সে হিমশীতল অনুভব করল, হাত-পা কাঁপতে লাগল। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল, সে শুধু বাড়ির নয়, সময়ের বেষ্টনীতে আটকে গেছে।
রাত পার হয়ে সকালে রহিমের কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না। কিন্তু বাড়ির দরজার কাছে তার নাম লেখা ছিল, যেন কেউ তাকে অপেক্ষা করছে ফিরবার জন্য।
গ্রামের কেউ জানত না সে কীভাবে হারিয়ে গেল, কিন্তু এই গল্প শোনার পর কেউই আর ওই বাড়ির কাছাকাছি যায়নি।
#sifat10
গাছের ছায়া
গ্রামের এক কোণে ছিল একটি বিশাল অমলতাস গাছ। দিনের বেলায় গাছটি খুবই শান্ত এবং ছায়াময়। কিন্তু রাতের বেলায় গাছের নিচে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে আসত, এবং অনেকেই সেখানে থেকে আসা কান্নার আওয়াজ শুনত।
ছোট্ট মনি নামের এক মেয়ে এক রাতে কৌতূহলবশত গাছের নিচে বসে গেলো। অন্ধকার ঘিরে ধরতেই সে শুনল, গাছের ছায়া যেন মানুষের মতো নড়াচড়া করছে। গাছ থেকে আসা কান্নার শব্দ যেন তার হৃদয় স্পর্শ করল। ভয়ে সে পালিয়ে গেল।
পরদিন থেকে গ্রামবাসীরা গাছের কাছে একা যাওয়ার কথা ভাবত না। কেউ কেউ বলত, “গাছের ছায়ায় লুকিয়ে আছে এক ধরনের পুরনো বেদনা, যা রাতের আঁধারে জীবিত হয়ে ওঠে।”
কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটতে শুরু করল—গাছের নীচে রাখা ফুলগুলো অদ্ভুতভাবে ঝরে পড়ত, আর রাতে গাছের কাছ থেকে শীতল বাতাস বইত, যা মানুষের রক্ত জমাট করে দিত।
গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতে শুরু করল, সেই গাছের ছায়ায় এক ধরনের আত্মা বাস করে, যেটা কখনো নিঃশব্দ, কখনো কান্নার সুরে তাদের সতর্ক করে।
#sifat10
ধোঁয়ার পথ
গ্রামের এক প্রান্তে সন্ধ্যার পর এক ধোঁয়ার আস্তরণ নেমে আসে। এই ধোঁয়া ছিল ঘন, সাদা এবং ঠাণ্ডা, যা দেখে মনে হতো যেন সময় নিজেই ধীরে ধীরে ঘুলে যাচ্ছে। গ্রামের লোকেরা এই ধোঁয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকত না। কারণ, যাদের ধোঁয়ার ভেতরে ঢোকার সাহস হতো, তারা আর ফিরে আসত না।
জয়নাল সাহেব নামের এক বৃদ্ধ লোক ছিল, যে একদিন রাতে কৌতূহলবশত ধোঁয়ার মধ্যে ঢুকে পড়ে। গ্রামের সবাই জানত, তাকে আর কেউ দেখেনি। রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি আলো ছড়াতে থাকে ধোঁয়ার মাঝে, যেন কেউ সেখানে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
পরদিন থেকে ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে হাঁটা লোকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে, যে ধোঁয়া আসলে এক রহস্যময় পথ, যেখানে প্রবেশ করলে কেউ আর ফিরে আসতে পারে না।
ধোঁয়ার ভেতর হাঁটা মানে হলো ভুল পথে পা দেয়া, আর সেই ভুল পথ থেকে ফিরে আসা অসম্ভব। তাই গ্রামের সবাই সন্ধ্যার পর ধোঁয়ার পথ এড়িয়ে চলে।
#sifat10