গল্প: ছায়ামূর্তির প্রত্যাবর্তন
পর্ব ৭: সম্মান যার মুখোশ
“প্রখ্যাত মানুষ” কথাটা শুনেই অরণ্যের মনে ঝড় বয়ে গেল। বৃদ্ধের কাছ থেকে ছবি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। আগের রাতে পড়া সেই ডায়রিটি আবার খুলে বসলেন। এক জায়গায় লেখা:
“সে এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সবাই তাকে সম্মান করে। কিন্তু আমার রক্ত তার হাতেই লেগে আছে।”
তিনি এক এক করে পুরনো দিনের কলেজ ম্যাগাজিন, ছবি আর নোট বের করতে থাকলেন। এক জায়গায় তিনি পেলেন সেই মুখ—ডিবি কলেজের ছাত্র সংসদের তৎকালীন নেতা, এখন শহরের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক—সুমিত কর।
সুমিত—যাকে অরণ্য একসময় স্নেহ করতেন, যে বিভার বন্ধু বলেই পরিচিত ছিল।
কিন্তু কী নিয়ে বিভা তার মুখোশ খুলে দিতে চেয়েছিল? কী এমন জানত সে?
ঠিক তখনই দরজায় কড়া নড়ল। অরণ্য খুলে দেখলেন, এক অচেনা নারী দাঁড়িয়ে আছে। হাতে পুরনো এক খাম। কাঁপা গলায় বলল,
“আমি বিভার ছোট বোন। আপনি যদি সত্যিটা জানতে চান, তাহলে এই চিঠিটা পড়তে হবে। তবে সাবধান থাকবেন—ওরা চায় না এটা কেউ জানুক।”
অরণ্য চিঠি হাতে নিলেন। খামের ওপর লেখা:
“আমার মৃত্যু এক দুর্ঘটনা নয়। প্রমাণ রয়ে গেছে।”
#sifat10
গল্প: ছায়ামূর্তির প্রত্যাবর্তন
পর্ব ৬: হারিয়ে যাওয়া সেই নাম
অরণ্য ডায়রির শেষ পাতার নিচে খুঁজে পেলেন এক ছেঁড়া ছবি—বিভা আর আরেক যুবক, অচেনা মুখ, তবে বিভার পাশে দাঁড়িয়ে এমন ভঙ্গিতে, যা ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত দেয়। ছবির পেছনে কালি ঝাপসা হয়ে যাওয়া লেখা:
“আমার গোপন, যার জন্য আমার মৃত্যু।”
অরণ্য হাঁপিয়ে উঠছিলেন। কী ছিল এই সম্পর্ক? কে ছিল সেই যুবক? কবরস্থানে দাঁড়িয়ে তিনি ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, হঠাৎ একটি বৃদ্ধ কণ্ঠ তাঁর পাশে এসে বলল,
“আপনিও খুঁজছেন বিভাকে?”
চমকে তাকালেন তিনি। এক বুড়ো কবর রক্ষক, চোখে কুঁজো চেহারা, কিন্তু দৃষ্টিতে যেন সব জেনে ফেলার ক্লান্তি।
“বিভা অনেক কিছু জানত,” বলল সে, “যেটা জানার কথা ছিল না। যেদিন সে মারা গেল, তার আগের রাতে এক যুবক এসেছিল এখানে। আমি দেখেছিলাম।”
অরণ্য থতমত খেয়ে বললেন, “কে ছিল সে?”
বৃদ্ধ বলল, “নাম জানি না, কিন্তু সে বারবার বলছিল—‘তুই যদি মুখ খোলিস, আমি তোকে শেষ করে দেব।’”
অরণ্য ছবি দেখাল। বৃদ্ধের চোখ কুঁচকে উঠল। “হ্যাঁ, এ-ই সেই ছেলে। কিন্তু সে তো… সে তো এখন একজন প্রখ্যাত মানুষ।”
#sifat10
গল্প: ছায়ামূর্তির প্রত্যাবর্তন
পর্ব ৫: কবরের নিচে যেটা লুকানো
অরণ্য সকাল হতেই ছুটে গেলেন শহরের প্রাচীন কবরস্থানে। বিভার নামের কবরটা খুঁজে পেতে সময় লাগল না—পাথরে খোদাই করা: বিভা বসু (১৯৮১–২০০৫)।
কিন্তু কবরের সামনে রাখা শুকনো পাতার নিচে তিনি পেলেন একটা ধাতব বাক্স। খোলার সাথে সাথেই ঘোর লাগা শুরু হলো মাথায়—ভেতরে রাখা একটি পুরোনো ডায়রি, যার পাতায় লেখা বিভার হাতের লেখা:
“যদি আমি ফিরে আসি, এর কারণ রয়েছে।”
প্রতিটি পাতায় ছিল বিভার না বলা কষ্ট, অপূর্ণ প্রেম, আর অরণ্যের অঙ্গীকার ভঙ্গের ক্ষত।
কিন্তু সবথেকে শেষ পাতায় লেখা ছিল এক বিস্ময়কর লাইন:
“আমি মরিনি অরণ্য, আমাকে মেরে ফেলেছিল।”
হাত থেকে ডায়রিটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। তাঁর চারপাশে বাতাস থমকে গেল। তিনি বুঝলেন, এটি শুধু অতৃপ্ত আত্মা
#sifat10
গল্প: ছায়ামূর্তির প্রত্যাবর্তন
পর্ব ৩: সাদা গোলাপের ছায়া
পরদিন সকালে অরণ্য বারান্দায় পা রাখতেই থমকে গেলেন। দরজার সামনে রাখা একটি কাঁচের বাটিতে ভেসে আছে একটি সাদা গোলাপ।
সাদা গোলাপ—বিভার প্রিয় ফুল। মৃত্যুদিনের আগে ঠিক এমনই একটি গোলাপ তিনি রেখে গিয়েছিলেন কলেজের গোপন বারান্দায়, যেখানে অরণ্য তাকে শেষবার দেখেছিলেন।
কিন্তু বিভা তো মৃত… নয়তো?
অরণ্য বাগানের দিকে গেলেন, গাছগুলো অনেক বছর পর নিজে জল দিয়েছিলেন সেদিন। হঠাৎ খেয়াল করলেন, বাগানের পুরোনো পাথরের বেঞ্চে খোদাই করা একটি নাম—"V.B." — যেটা তিনি আগে কখনও দেখেননি।
তিনি হাত বুলিয়ে নামটা ছুঁতেই পেছনে কার যেন নিঃশ্বাসের শব্দ—দ্রুত ফিরে তাকালেন, কেউ নেই। কিন্তু কোথা থেকে যেন শোনা গেল এক নারীকণ্ঠ—নরম, ফিসফিসে:
“অরণ্য, কথা রেখো…”
তিনি ঘরে ফিরে এলেন, দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। আয়নায় এবার শুধু নিজের প্রতিবিম্ব নয়—কোনো এক নারীর দীর্ঘ চুলের ছায়া ধীরে ধীরে তাঁর কাঁধ ছুঁয়ে পিছনে মিলিয়ে গেল।
#sifat10
গল্প: ছায়ামূর্তির প্রত্যাবর্তন
পর্ব ২: আয়নার অন্তরালে
অরণ্য স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আয়নার দিকে। আয়নার ভিতরে থাকা ছায়াটি যেন একটু একটু করে স্পষ্ট হচ্ছে—একটা মলিন চেহারা, চোখদুটো যেন আগুনের মতো জ্বলছে। ঠোঁটে কেমন এক চাপা হাসি, যেন কোনো পুরোনো প্রতিশোধের আনন্দে উদ্ভাসিত।
তিনি পেছনে ফিরলেন—ঘরে কেউ নেই। আবার আয়নার দিকে তাকাতেই, সেই মুখ হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল। শুধু কুয়াশার মতো ধোঁয়া রয়ে গেল আয়নার কাচে।
অরণ্য জানতেন, এটা স্বপ্ন নয়। এ ঠিক সেই মুখ… বিশ বছর আগে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া বিভা… তাঁর প্রথম ভালোবাসা, যার মৃত্যুকে ঘিরে আজও বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে।
সেই রাতে ঘুম এল না তাঁর চোখে। পরদিন সকালে তিনি খামটা আবার খুলে দেখলেন। এবার সেখানে আরেকটি কাগজ—যেটা আগের দিন ছিল না। লেখা:
“বসন্তের শেষ দিনে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে, ভাঙতে পারো না অরণ্য।”
তিনি কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বললেন, “তুমি সত্যিই ফিরে এসেছো?”
#sifat10
mdalamingazi
Slet kommentar
Er du sikker på, at du vil slette denne kommentar?