গল্পের নাম: রাতদুপুরের পদধ্বনি
স্থান: মধুবন গ্রাম, নদীয়ার এক কোণায় অবস্থিত ছোট্ট, নিরিবিলি একটি জনপদ।
সময়: ১৯৮৩ সালের বর্ষাকাল।
গল্প:
মধুবন গ্রামের একপ্রান্তে ছিল একটি পুরনো, জরাজীর্ণ জমিদারবাড়ি — সবাই একে ডাকত “চৌধুরীবাড়ি।” বহু বছর আগেই চৌধুরী পরিবার কলকাতায় চলে গিয়েছে, বাড়িটা এখন প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। দিনের বেলায় ছাগল-গরু ঢোকে, কিন্তু সূর্য ডোবার পর ওদিক কেউ যায় না।
গল্পের নায়ক অর্ঘ্য, সদ্য শহর থেকে গ্রামে এসেছে মামার বাড়িতে কিছুদিনের জন্য। শুনে ফেলেছে চৌধুরীবাড়ির গল্প — রাতদুপুরে নাকি কারা যেন সিঁড়িতে উঠানামা করে, ভারি ভারি পায়ের শব্দ শোনা যায়। মাঝে মাঝে ঝোলানো পুরনো জানালাগুলো নিজে নিজেই খটাখট করে।
অর্ঘ্যর বিশ্বাস হয়নি। একদিন সে ঠিক করল, রাতেই চুপিচুপি চৌধুরীবাড়িতে যাবে। বন্ধু রতনের সঙ্গে মশলা চা খেয়ে, টর্চ আর ক্যামেরা নিয়ে রাত সাড়ে বারোটায় ঢুকে পড়ল বাড়ির ভেতর।
সেই রাতটা ছিল ভয়াবহ নীরব। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া কিছুই নেই। হঠাৎ টর্চের আলোয় দেখা গেল একটা ধুলোমাখা আয়না। সেখানে কী যেন ছায়া ভেসে উঠল — এক নারীমূর্তি, মাথায় সাদা শাড়ি চাপানো, চাহনিতে দুঃখ আর অন্ধকার।
রতন তো দৌড়ে পালালো। কিন্তু অর্ঘ্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, যেন পাথর হয়ে গেছে। সেই ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে এল, তারপর নিঃশব্দে বলে উঠল, “তুমি কি আমার সন্তানকে দেখেছো?”
অর্ঘ্যর হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে গেল।
পরদিন সকালে তাকে গ্রামের লোক মাঠের ধারে অচেতন অবস্থায় পেল। জ্বর ছিল ১০৩ ডিগ্রি। ক্যামেরা তো পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু মেমোরি কার্ডে একটা অস্পষ্ট ছবি থেকে গিয়েছিল — একটা ছায়া, একজোড়া চোখ, আর পিছনে ধ্বসে পড়া সিঁড়ি...
---
শেষ বাক্য:
চৌধুরীবাড়ি আজও আছে, শুধু রাত হলে এখনও মাঝেমাঝে শোনা যায় পদধ্বনি... ভারি ভারি পায়ের শব্দ...
Md Joynal abedin
حذف نظر
آیا مطمئن هستید که می خواهید این نظر را حذف کنید؟