জুলাই, শুক্রবার
আজ শুক্রবার। ঝ আপিসে যাবেন না। ঝ আপিসে না গেলেই যে এ ঘরে এসে দীর্ঘক্ষণ কাটাতে পারেন, তা নয়। তবু ঝ বাড়িতে থাকলে আমার স্বস্তি হয়। স্বস্তি এই জন্য নয় যে দুবেলা খাবার জুটবে আমার। স্বস্তি এই জন্য যে বাড়িতে অচেনা আততায়ী ঢুকতে নিলে ঝ বাধা দেবেন। ঝর কাছে পিস্তল থাকে আত্মরক্ষার জন্য। ঝ আদৌ গুলি চালাতে পারবেন কি না, একদল সশস্ত্র লোক ঢুকে গেলে ঝর পক্ষে সম্ভব হবে কি না থামানো সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েও মনে হয় বাড়িটি এখন নিরাপদ। ঝর পিস্তল যদি কাজই না করে, অন্তত ঝ তো আগেভাগে বিপদের খবর পেয়ে আমাকে ওই খোপটিতে ঢুকিয়ে রাখতে পারবেন।
মৌলবাদীরা জয়ধ্বনি করছে সারা দেশে। জনগণকে তারা অভিনন্দন জানাচ্ছে হরতাল সফল করার জন্য। হরতাল সফল। তাদের বিজয় অনিবার্য। তসলিমার ফাঁসি হবে। ব্লাসফেমি আইন হবে। নতুন কর্মসূচি দিয়ে দিয়েছে, আজ বিকেলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামাতে ইসলামীর সমাবেশ আর বিক্ষোভ মিছিল, আজ থেকে ১৫ই জুলাই পর্যন্ত গণসংযোগ, ১৬ থেকে ৩১শে জুলাই পর্যন্ত থানায় থানায় ইমাম ওলেমা সম্মেলন, এই সময় পর্যন্ত দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। জামাতে ইসলামীর সভায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু কোরান ও আল্লাহ রসুলের অবমাননা সহ্য করবে না। বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তসলিমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, অথচ ১২ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার বিষয়ে কিছুই বলেননি। শায়খুল হাদীস বলেছেন যে দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঘরে ফিরবেন না।
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র সমাজও মাসব্যাপী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে। আরেকটি সুখবর ছাপা হয়েছে পত্রিকায়, নয়াদিল্লি থেকে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসেছেন বাংলাদেশে, আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলতে।
খবরটি দেখে ঝ বললেন, নরওয়ে শুনেছি অনেক টাকা বাংলাদেশকে সাহায্য দেয়। খালেদা জিয়া উল্টো পাল্টা করলে বিপদ আছে। তার ওপর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্বয়ং বিল ক্লিনটন বলেছেন তোমার নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন।
–তাহলে কি জামিন হবে আমার? সরকার আমাকে নিরাপত্তা দেবে? মামলা তুলে নেবে? কিন্তু তা করলে তো মৌলবাদীরা সরকারকে খেয়ে ফেলবে।
খেয়ে ফেলা শব্দদুটো ঝ কে হাসায়। তিনি মাথা ঝাঁকিয়ে বলতে থাকেন, হাল ছেড়ো না, দেখ কি হয়। ওয়েট এণ্ড ওয়াচ।
আজ ইনকিলাবের পুরো পাতার সবটা জুড়ে খবর।
আল কোরানের মর্র্যাাদা সমুন্নুন্নত রাখতে সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত।
গতকাল গোটা বাংলাদেশ ছিল তৌহিদী জনতার দখলেঃ নাস্তিক মুরতাদ ইসলাম বিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মুসলমানের রায়
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল অভূতপূর্ব এক হরতালের দিন। গোটা বাংলাদেশ ছিল তৌহিদী জনতার দখলে। রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি শহর বন্দর থেকে শুরু করে ৬৮ হাজার গ্রামে