লঞ্চে রাতের খাওন, আকাশে তারা, আর নদীর মাঝখানে ঘুমানোর প্রস্তুতি

এটি সম্পূর্ণ আমার নিজের অভিজ্ঞতা। কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। ধন্যবাদ।

বিকালটা কইরা আমরা নদীর বুকে ভাসতাছি, চারপাশ একেবারে জ্যান্ত ছবি হইয়া রইছে। সন্ধ্যার দিকে লঞ্চে একটা নরম আলো জ্বালাইয়া দিল, একটু পর গাইড ভাই ডাক দিল, “সবার খাওনের সময় হইছে, নিচে চইলেন।”

 

নামছি নিচে ক্যান্টিনে। আম্মা বলল, “হাত ধুইয়া খাইতে বইসো, জোনাকি ধইরা নিস না!” হা হা করে হেসে উঠলাম সবাই। খাবার ছিল একদম ঘরোয়া — ভাত, ডাল, আলু ভাজি, আর টুকটাক মাছ। নদীর মাঝখানে বইসা এইরকম গরম গরম ভাত খাইতে খাইতে মনে হইল আমরা কোনো হোটেলে না, যেন নিজের বাড়ির উঠানে খাইতাছি।

 

খাওন শেষ কইরা ছাদে উঠলাম আবার। ওপরে আকাশ ভইরা তারা! এত তারাভরা আকাশ বহুদিন দেখি নাই। ছোট ভাই কইল, “ভাইয়া, এই গুলা সব নাকি আলাদা আলাদা গ্রহ!” আমি কইলাম, “হই, আর ওই দূরের তারা তুই, আর এইডা আমি।” ভাইয়া মুখ চিপড়ায়া হাসতেছিল।

 

নদী একেবারে নিস্তব্ধ, মাঝে মাঝে পানি ছাঁটায় নৌকার আওয়াজ হালকা আসে। নদীর গায়ে গায়ে লবণ গাছ, সুন্দরবনের ছায়া পড়তেছে নদীর গায়ে। আব্বা কইল, “এই পরিবেশে ঘুম আইলে জীবনে সব দুঃখ ভুলা যায়।”

 

আমাদের ঘরের ভিতরে বইসা সবাই গল্প করতেছিল। আম্মা পুরান দিনের গল্প শোনাচ্ছে — “তোমার আব্বার লগে প্রথম যাত্রা করছিলাম যশোরে, তখনো এইরকম লঞ্চে উঠি নাই।” আমরা হাসি ঠাট্টা কইরা, মাথায় চাদর দিয়া জানালার ফাঁক দিয়া তাকায়া থাকলাম।

 

ধীরে ধীরে রাত বাড়তেছিল। লঞ্চের নরম দুলুনিতে ঘুমটা চোখে চাপ দিতেছিল। নদীর আওয়াজ, হালকা বাতাস, আর গায়ে পাতলা কম্বল – এই সব মিলায়া এক অপূর্ব অনুভূতি। শহরের কোলাহল ছাড়াই এমন শান্ত পরিবেশে ঘুমানো, সত্যি স্বপ্নের মতো।

 

ঘুমাইতে যাইতেছি, মনে মনে ভাবতাছি, কালকে যেই বনের ভিতরে যামু, হইতো বাঘ দেখুম, হইতো হরিণ, কিন্তু যেই অভিজ্ঞতা আসতেছে, এই জীবনের এক অমূল্য ধন হইব।


Hridoy Sarker

85 Blog Mesajları

Yorumlar