ভালো। দয়া করে তুমি আমাকে মেরে ফেলো।
যুলকারনাইন কিছুতেই তরুণীকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারছিল না, বাধ্য হয়েই যুলকারনাইন তাকে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল। তাও অসম্ভব হওয়ায় এক পর্যায়ে সে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিল। যুলকারনাইন তাকে বার বার অভয় দিতে দিতে বলছিল-
এই অবস্থায় তোমাকে ফেলে যাওয়াটা হবে আমাদের জন্যে অন্যায়। বিশ্বাস করো, আমাদের হাতে তোমার কোন ধরনের নির্যাতিত হওয়ার আশংকা নেই। নারীর মর্যাদা রক্ষাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। তোমার গায়ে কেউ হাত দেবে না। তোমার আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তুমি নির্ভয়ে আমার সাথে এসো।
মেয়েটিকে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে যুলকারনাইন তার উর্ধতন সেনা কমান্ডারের কাছে এলো। সময়টা ছিল খুবই জটিল। এ সময় কোন অসহায় মেয়েকে সেবা দেয়ার অবকাশ ছিল না। কমান্ডার যুলকারনাইনকে বললেন, একে তোমার কাছে রাখতে চাইলে রাখতে পারো, নয়তো কোন হিন্দুর কাছে রেখে আসতে পারো। তবে সতর্ক থাকবে এ যেনো তোমার কর্তব্য পালনে কোন ধরনের ত্রুটির কারণ না হয়।
অবশ্য সে দিন এই অসহায় হিন্দু তরুণী যুলকারনাইনের কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারেনি। তার কর্তব্য কর্মে কোন বাধা হয়নি, তবে তার জীবনের বাঁধনে আটকা পড়ে এই তরুণী! হয়ে পড়ে জীবন সঙ্গিনী।
হওয়ায় এক পর্যায়ে সে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিল। যুলকারনাইন তাকে বার বার অভয় দিতে দিতে বলছিল-
এই অবস্থায় তোমাকে ফেলে যাওয়াটা হবে আমাদের জন্যে অন্যায়। বিশ্বাস করো, আমাদের হাতে তোমার কোন ধরনের নির্যাতিত হওয়ার আশংকা নেই। নারীর মর্যাদা রক্ষাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। তোমার গায়ে কেউ হাত দেবে না। তোমার আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তুমি নির্ভয়ে আমার সাথে এসো।
মেয়েটিকে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে যুলকারনাইন তার উর্ধতন সেনা কমান্ডারের কাছে এলো। সময়টা ছিল খুবই জটিল। এ সময় কোন অসহায় মেয়েকে সেবা দেয়ার অবকাশ ছিল না। কমান্ডার যুলকারনাইনকে বললেন, একে তোমার কাছে রাখতে চাইলে রাখতে পারো, নয়তো কোন হিন্দুর কাছে রেখে আসতে পারো। তবে সতর্ক থাকবে এ যেনো তোমার কর্তব্য পালনে কোন ধরনের ত্রুটির কারণ না হয়।
অবশ্য সে দিন এই অসহায় হিন্দু তরুণী যুলকারনাইনের কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারেনি। তার কর্তব্য কর্মে কোন বাধা হয়নি, তবে তার জীবনের বাঁধনে আটকা পড়ে এই তরুণী! হয়ে পড়ে জীবন সঙ্গিনী।
পবিত্র মেয়েই মনে করেছি এবং পবিত্র রাখারই মনস্থির করেছি। এখন মন থেকে সব ভয় ঝেড়ে ফেলে বলো- কোথায় যেতে চাও?
তরুণী কোন কথা না বলে দীর্ঘ সময় যুলকারনাইনের দিকে তাকিয়ে রইল। এক সময় তার দু'পা জড়িয়ে ধরে পায়ে মাথা ঠেকালো। যুলকারনাইন দ্রুত তার পা সরিয়ে নিয়ে বললো- আমাদের ধর্মে কোন মানুষকে অপর মানুষের সেজদা করার অনুমতি নেই। তুমি আমার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে আমাকে গোনাহগার বানিও না। বলো, কোথায় যেতে চাও তুমি?
তরুণী একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, মেয়ে হয়ে জন্মালে মা বাবার ঘর ছেড়ে একদিন না একদিন কারো না কারো ঘরে যেতেই হয়। আমার মা বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন তুমিই বলো, আমি কি করবো? কোথায় যাবো?
আমার সাথে থাকতে চাইলে তোমাকে তোমার ধর্মত্যাগ করতে হবে, বললো যুলকারনাইন। কিন্তু তোমর ধর্ম-ত্যাগ করলে অল্প দিনের মধ্যেই তুমি অনুভব করতে পারবে, ধর্মত্যাগ করে তুমি ভালই করেছো।
ভারত অভিযান (৫)-
যুলকারনাইনের মুখে ধর্মত্যাগের কথা শুনে তরুণী চিন্তায় পড়ে গেল। যুলকারনাইন তরুণীকে বুঝতে দিতে চাচ্ছিল না, সে তরুণীর প্রেমে পড়ে গেছে। তরুণী ছিল খুব সুন্দরী, চলন বলনে মার্জিত। তরুণীর মুখের ভাষা ও কণ্ঠস্বর যে তরুণা ছিল খুব সুন্দরী, চা
সময়টা তরুণী যুলকারনাইনের তাঁবুতেই কাটায়। যেহেতু যুলকারনাইন ছিল কমান্ডার। এজন্য তার জন্য ছিল স্বতন্ত্র তাঁবু। সেই তাঁবুতে পড়ে মেয়েটি কাঁদতে থাকল এবং তাকে মেরে ফেলার জন্যে অনুরোধ করতে লাগল। যুলকারনাইন তাকে নানাভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু তরুণী কিছুতেই আশ্বস্তবোধ করছিল না। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে মেয়েটির চোখ বন্ধ হয়ে এলো। ঘুমিয়ে পড়ল সে। ঘুম থেকে জেগে সে যখন যুলকারনাইনের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখতে পেল না তখন নিজের মধ্যেও কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব করল না। তার মনে হলো মা বাবার সান্নিধ্যে যেভাবে ঘুমাতো সেভাবেই ঘুমিয়েছে সে।
এমন অবস্থা দেখে তরুণী যুলকারনাইনকে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার? আমাকে কি তোমার মনে ধরেনি?
তোমাকে যদি ভালো না লাগতো, তাহলে আমার সাথে না রেখে তোমাকে অন্য কোন স্থানে রেখে আসতাম। বললো যুলকারনাইন। তুমি বলছিলে না, তুমি কুমারী। আমি বলছিলাম- হ্যাঁ, তুমি খুবই সুন্দরী। আমি তোমাকে একজন পবিত্র মেয়েই মনে করেছি এবং পবিত্র রাখারই মনস্থির করেছি। এখন মন থেকে সব ভয় ঝেড়ে ফেলে বলো- কোথায় যেতে চাও?
তরুণী কোন কথা না বলে দীর্ঘ সময় যুলকারনাইনের দিকে তাকিয়ে রইল। এক সময় তার দু'পা জড়িয়ে ধরে পায়ে মাথা ঠেকালো। যুলকারনাইন দ্রুত
হতে পারে এই তরুণী অন্তর দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। তার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দু রয়ে গেছে। নিজের জীবন বাঁচানোর তাকিদেই হয়তো সে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে।
মথুরা জয়ের পর এক বছর চলে গেছে। যুলকারনাইন এখন রাড়ীতে মহারাজা রাজ্যপালের উপদেষ্টা হিসেবে অবস্থান করছে। রাজ্যপাল বাহ্যত নামে রাজা থাকলেও তার সেই দাপট ও কর্তৃত্ব ছিল না। সে এখন আর একজন লড়াকু রাজা নয়, প্রকৃতই একজন পুতুল রাজা মাত্র। অঢেল বিত্তবৈভবের কারণে সে রাজার হালতেই চলতো বটে। কিন্তু আগের জাঁকজমক আর ছিল না।
অবশ্য নর্তকীর নাচ বাদকদের বাজনা ছাড়া মহারাজার দিন কাটতো না। ফলে রাজ্য হারা রাজা হলেও এসব আয়োজনের কোন ঘাটতি ছিল না রাজ্যপালের। রাড়ীতে রাজ্যপাল অল্প দিনের মধ্যেই একটি রাজ প্রাসাদ গড়ে তুলেন এবং রাজমহলের এসব গান বাজনায় গযনীর কমান্ডার ও উপদেষ্টাদেরও দাওয়াত দেন। কিন্তু গযনী সরকারের কোন কর্মকর্তা রাজার গান বাজনাও নৃত্যগীতে অংশগ্রহণ করেন না।
রাড়ীতে পূর্ব থেকেই একটি মন্দির ছিল। সেটিতে আগে জৌলুস না থাকলেও রাজধানী ঘোষণার পর মন্দিরটি জৌলুসপূর্ণ হয়ে ওঠে। দলে দলে পূজারীরা মন্দিরে পূজা দিতে ভীড় করে। হিন্দুস্তানের বিভিন্ন জায়গা থেকে মন্দিরে এসে আস্তানা গেড়ে বসে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞ পুরোহিত।
সুলতান মাহমুদের নির্দেশে তার কর্মকর্তারা রাজ্যপাল ও হিন্দুদের পূজা