রহিমের রেডিও বিপদ
রহিম ছিল গ্রামের একমাত্র রেডিও-প্রেমিক। তার ঠাকুরদার রেখে যাওয়া পুরনো রেডিওটা ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। সকালবেলা ‘আকাশবাণী’, দুপুরে ‘বেতার নাটক’, আর রাতে খবর শুনে সে ভাবতো, “এই তো শহরের লোকদের মতো চলছি!”
একদিন রেডিওতে খবর এলো—“বৃষ্টি হতে পারে, প্রস্তুত থাকুন।”
রহিম বলল, “আমার রেডিও যা বলে, সেটাই সত্য!”
সে হাঁক দিল, “সবাই ঘরে ঢুকো! আকাশে কালো মেঘ নেই, কিন্তু রেডিও বলছে বৃষ্টি আসছে!”
লোকজন হাসল, “রহিম ভাই, আকাশে এক টুকরো মেঘ নেই!”
কিন্তু রহিম গোঁ ধরে বলল, “দ্যাখো না, হঠাৎ এক ঘন্টায় প্লাবন হবে!”
সে নিজের উঠানে ত্রিপল টাঙিয়ে বসল, ছাগল-মুরগি ঢুকিয়ে রাখলো ভিতরে, নিজেও রেইনকোট পরে অপেক্ষা করতে লাগল।
ঘণ্টা গেল এক, দুটো, তিনটে… রোদে তার মাথা তেতে উঠলো। বৃষ্টির ছিটেফোঁটা নেই।
একটা ছোট ছেলে পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল, “রহিম কাকা, এইটা কি গরম বৃষ্টি?”
রহিম গম্ভীর মুখে বলল, “তোমরা বুঝবে না, এইটা হলো ‘অদৃশ্য বৃষ্টি’!”
পরদিন আবার রেডিও বলল, “আজ ঝড় হতে পারে।”
রহিম আবার প্রস্তুত! বাড়ির চালের টিন বেঁধে, কলসি উল্টে, গলায় দড়ি বেঁধে বলল, “ঝড় যদি উড়ে নিয়ে যায়, তবে যেন পাইপে আটকে পড়ি!”
লোকজন এবার হেসে গড়িয়ে পড়লো। কেউ বলল, “রহিম ভাই, আপনার রেডিও বোধহয় পুরনো হয়ে গেছে!”
রহিম মাথা নেড়ে বলল, “না রে ভাই, আমি তোকে বলছি—রেডিও কখনো ভুল করে না, শুধু সময়টা একটু আগাতে-পিছাতে পারে!”
সেই থেকে রহিমের নাম হয়ে গেল ‘রেডিও রহিম’। এখনো কেউ বৃষ্টি আসার আগেই জিজ্ঞেস করে, “রেডিও রহিম ভাই, আজ কি আবার ত্রিপল টাঙাতে হবে?”
#sifat10
নসু মুচির নোটবই রহস্য
নসু ছিল গ্রামের একমাত্র মুচি। রাস্তার ধারে একটা ছাপড়া দোকান, টাঙানো কয়েক জোড়া পুরোনো জুতো, আর মাথায় চিরচেনা গামছা। কিন্তু নসুর এক অদ্ভুত অভ্যাস ছিল—সে সবকিছু একটা নোটবইতে লিখে রাখত। কার জুতো ঠিক করল, কে টাকা দিল, কে দিল না—সব!
লোকজন ভাবতো, “এই তো মুচি, আবার লেখাপড়া করে বুঝি!”
নসু বলতো, “এই বইটা আমার সব, হারালে তো সর্বনাশ!”
একদিন হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো। নসুর নোটবই হারিয়ে গেল। দোকানে পায়নি, বাড়িতেও না। সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো, “ও বই ছাড়া আমি শেষ!”
গ্রামের লোকজন ভিড় করল দোকানে। মজা দেখতে কে না চায়! কেউ বলল, “নসু ভাই, আমার তো আপনার কাছে টাকা নাই, আপনি ভুলে গেলে আমি ধন্য!”
আরেকজন বলল, “বইয়ের সঙ্গে কি মেমোরিও গেছে?”
তবে সবচেয়ে ভয় পেল সেই লোকটা, যার ৫ জোড়া জুতো মেরামত করিয়ে টাকা দেয়নি—নসু তাকে প্রতিদিন বই দেখে মনে করিয়ে দিত।
তিনদিন পর হঠাৎ দেখা গেল—নসু নতুন এক নোটবই হাতে বসে আছে, আর মুখে রহস্যময় হাসি।
লোকজন বলল, “এই বই আবার কোথা থেকে এল?”
নসু বলল, “আগের বই পাই নাই। কিন্তু সব নাম মনে আছে। নতুন বইতে আবার সব লিখে ফেলেছি!”
ভয়ে সেই ঋণী লোক নিজেই এসে বলল, “ভাই, আপনার তো মনে শক্তি বইয়ের চেয়ে বেশিই!”
নসু মুচকি হেসে বলল, “জুতো সেলাই আর হিসাব রাখা—দুটোই আমার শিল্প!”
সেই থেকে সবাই বলে, “নসুর পায়ে জুতো না থাকলেও, তার স্মৃতিতে তালা লাগানো যায় না!”
#sifat10
দেলু আর তার যান্ত্রিক পাখি
দেলু ছিল গ্রামের সবচেয়ে উদ্ভট স্বভাবের ছেলে। ওর মাথায় যেই না কোনো নতুন চিন্তা ঢোকে, অমনি সে সেটা বানাতে বসে যায়। একবার হাঁসের মত হাঁটতে হাঁটতে সে বলল, “যদি আমি একটা পাখির মতো যন্ত্র বানাতে পারি, যে উড়বে আর কথা বলবে—তাহলে গ্রামের সবাই তাক লাগিয়ে যাবে!”
তিন মাস ঘরে বসে, ভাঙা রেডিও, পুরোনো পাখার ব্লেড আর সাইকেলের চেন দিয়ে সে বানিয়ে ফেলল এক বিচিত্র ‘যান্ত্রিক পাখি’। পাখির গায়ে রঙ করলো—একপাশে লেখা “আকাশরাজা”, আর অন্য পাশে “দেলু ইনভেনশন”।
গ্রামের মাঠে সবাইকে ডেকে আনলো। বলল, “আজ আকাশরাজা প্রথম উড়বে! দেখো, আমিই দেশের পরবর্তী বিজ্ঞানী!”
লোকে ভিড় করে দাঁড়ালো, কেউ হাসলো, কেউ কৌতূহল নিয়ে তাকালো।
দেলু বড় ভঙ্গিতে পাখির সুইচ অন করলো। মোটরের ঘর্ঘর শব্দ হতেই পাখিটার ডানা কাঁপতে শুরু করলো।
হঠাৎ এক বিকট শব্দ—ধুম! পাখি মাটি থেকে এক ইঞ্চিও উঠলো না, বরং তার ডানাটা খুলে গিয়ে পাশের হারুন কাকার লুঙ্গিতে জড়িয়ে গেল! হারুন কাকা হাউমাউ করে চিৎকার, “এই কী হইলো রে!”
পাখির মাথা ঘুরে গিয়ে কারো পায়ের ওপর পড়লো, আর বাকি অংশ ছিটকে গিয়ে মাঠে গরুর পাশে গিয়ে পড়লো। গরু ভয় পেয়ে দৌড় দিল, সঙ্গে দেলুও!
লাজে-লজ্জায় দেলু সেই দিন পুরোটা মাঠে লুকিয়ে রইলো। লোকজন এখনো বলে, “দেলু না পাখি বানাতে গিয়ে লুঙ্গি উড়িয়ে দিয়েছিল!”
তবে দেলু দমে যায়নি। পরে সে বলেছিল, “ভুলে যদি এমন হয়, ঠিকভাবে করলে তো আকাশই আমার!”
#sifat10