আয়নার ওপারে
তিথি নতুন একটা হোস্টেলে উঠেছে। রুমটা বেশ পুরনো, তবে এক কোণে একটা প্রাচীন আয়না আছে—দেখলেই কেমন যেন ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায় শরীরে। আয়নাটা খুব পরিষ্কার, কিন্তু মাঝে মাঝে তিথির মনে হয়, ওর প্রতিবিম্বটা ঠিক ওর মতো না।
একদিন সে আয়নায় তাকিয়ে দেখতে পেল—তার প্রতিবিম্বটা হাসছে, অথচ সে হাসেনি। চমকে উঠল তিথি। পরের দিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে সেই প্রতিবিম্ব আবার আলাদা কিছু করছিল, যেমন চোখ টিপছে, অথচ তিথি স্থির দাঁড়িয়ে।
তিথি ভয় পেয়ে আয়নাটা ঢেকে দিল। কিন্তু রাতে অন্ধকার ঘরে নিজে থেকেই পর্দাটা পড়ে গেল। এবং আয়নার ভিতর থেকে একটা ফিসফিসে আওয়াজ ভেসে এল—
"তুই তো আমার জায়গা নিয়েছিস… এবার আমার পালা!"
সেই রাতে তিথি আর ঘুমাতে পারেনি। আয়নার দিকে তাকাতে ভয় করছিল। সকালে উঠে দেখল আয়নায় কোনো প্রতিবিম্ব নেই! সে দৌড়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল—কিন্তু নিজের মুখ দেখতে পেল না, শুধু শুনতে পেল আয়নার ভিতর থেকে চেনা গলা—
"আমি এখন বাইরে, তুই আয়নার ভেতরে।"
তারপর থেকে তিথির রুমমেটরা বলে—আয়নায় তিথিকে দেখা যায় না, আর সে নাকি আগের মতো নেই—চোখের দৃষ্টিতে যেন অন্য কিছু ভেসে ওঠে।
#sifat10
চিঠির জবাব
রিমি ছোটবেলা থেকেই একা। মা-বাবা বাইরে থাকে, সে বাড়িতে দাদির সঙ্গে বড় হয়েছে। দাদি তাকে একটা আজব খেলার কথা বলেছিল—"চেয়ারের নিচে রেখে চিঠি লিখো অচেনা কাউকে, সে উত্তর দেবে।"
রিমি প্রথমে হেসেছিল, কিন্তু একদিন মজা করে লিখল—
“তুমি কে? তুমি কি আমায় দেখছো?”
পরদিন সকালে চেয়ারের নিচে আরেকটা চিঠি পাওয়া গেল—
“আমি সবসময় তোমার পাশেই থাকি।"
রিমি অবাক! কে লিখল এটা? বাড়িতে তো কেউ নেই।
সে আরও চিঠি লিখতে শুরু করল। প্রতিটি চিঠির উত্তর আসত, এবং উত্তরগুলো যেন তাকে খুব ভালো করে চেনে। তার পছন্দ-অপছন্দ, দুঃখ-ভয় সব জানে।
একদিন রিমি লিখল—
“তুমি কি বন্ধু হবে আমার?”
উত্তর এলো—
“আমি তো শুরু থেকেই তোমার বন্ধু, কিন্তু তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।”
রিমি অবাক হয়ে দাদির কাছে গেল। দাদি তখনো জেগে ছিল, বলল—
“ওই চিঠিগুলো তোর ছোটবেলার বন্ধু লিখত, যে পাঁচ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় চলে গিয়েছিল। তুই প্রায়ই বলতিস, ওর ছায়াকে দেখিস।”
রিমির মনে পড়ল এক ঝলক স্মৃতি—একটা ছোট ছেলে, যার নাম ছিল নীল।
সেদিন রাতে, রিমি শেষ চিঠিতে লিখল—
“নীল, তুমি থাকো?”
উত্তরে শুধু একটা লাইন—
“আমি ছিলাম, আছি, থাকবো… যতক্ষণ তুমি লিখো।”
#sifat10