বোকা রাজা আর গায়েবের ঘড়ি
এক দেশে ছিল এক রাজা, নাম তার বাদশাহ হুমায়ুন। রাজা খুব ধনী হলেও ছিল ভীষণ সরল, কেউ যা বলত, সে তাই বিশ্বাস করত।
একদিন দরবারে হাজির হলো এক ফকির বেশে লোক। তার হাতে একটা পুরোনো, মরিচা ধরা ঘড়ি। সে রাজাকে বললো, “মহারাজ, এ ঘড়ি গায়েবের! যার হাতে থাকবে, সে ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে!”
রাজা তো শুনেই মহা খুশি! সে চিৎকার করে বললো, “আমি এখন জানব আমার শত্রু কে, কে আমায় ঠকাচ্ছে, আর আগামীকাল কী ঘটবে!”
ফকির বললো, “এই ঘড়ির দাম মাত্র এক হাজার সোনার মুদ্রা।”
রাজা সঙ্গে সঙ্গে অর্থ দিয়ে ঘড়ি কিনে ফেললো।
পরদিন সকাল থেকে রাজা ঘড়ি হাতে নিয়ে দরবারে বসে। সবাইকে জিজ্ঞেস করছে, “এই ঘড়ি বলছে তুমি আজ আমার সঙ্গে মিথ্যা বলবে, তাই না?”
মন্ত্রীরা হতবাক, সৈন্যরা কাঁপছে, সবাই ভয় পেতে লাগলো।
তিন দিন পর, রাজপ্রাসাদের বাবুর্চি রাজাকে খিচুড়ি দিতে এলো। রাজা হঠাৎ বললো, “ঘড়ি বলছে তুমি আমার খাবারে বিষ দিয়েছ!”
বাবুর্চি কেঁদে কুল পায় না, “মহারাজ, আমি কিছু দেইনি!”
তখনই রাজমাতা এলেন। সব শুনে বললেন, “তুমি কি ঘড়িতে বিশ্বাস করছ, না নিজের বুদ্ধিতে?”
রাজা বললো, “ঘড়ি তো মিথ্যা বলে না!”
রাজমাতা হেসে বললেন, “এই ঘড়ি আমি চিনি। এটা তোমার বাবার আমলে রান্নাঘরে ঝুলতো, সময়ও ঠিকমতো দেখাত না। এক প্রতারক এখন এটা দিয়ে তোমায় বোকা বানাচ্ছে!”
রাজা অবাক হয়ে বুঝতে পারলো—তাকে ঠকানো হয়েছে। ফকির তখন পালিয়ে গেছে বহু দূরে।
রাজা মুচকি হেসে বললো, “ঠিকই বলেছ মা। ঘড়ি দিয়ে ভবিষ্যৎ দেখা যায় না, বুদ্ধি দিয়েই সময়ের কাজ বুঝতে হয়।”
এই কিস্সা শেখায়—যন্ত্র নয়, নিজের বিবেচনাই মানুষকে বাঁচায়। অন্ধ বিশ্বাস সর্বনাশ ডেকে আনে।
#sifat10
গাধা যখন হাকিম হলো
একদিন এক ছোট্ট গ্রামে হঠাৎ ঘোষণা এলো—"আগামীকাল এক বিশেষ হাকিম আসবেন, যিনি ন্যায়বিচার করবেন সবাইকে।"
সবাই উত্তেজিত। পরদিন সকালে মাঠে জমায়েত হলো মানুষ। হঠাৎ দেখা গেল, এক চকমকে পাগড়ি আর লাল জোব্বা পরা একজন গাধাকে সাজিয়ে এনে রাখা হয়েছে মঞ্চে!
গ্রামের মোড়ল বললো, “এই গাধাই আজকের হাকিম। আজ থেকে এর বিচারেই সব সমস্যার সমাধান হবে!”
লোকজন তো হেসে গড়িয়ে পড়ে, কেউ বললো, “গাধা বিচার করবে?”
মোড়ল বললো, “না হাসলে ভালো হয়। এই গাধাই ঠিক বলবে কার সত্য, কার মিথ্যা।”
পরীক্ষা হিসেবে প্রথমে এলো দুই ভাই—একজন বলল, “আমার জমি ও চাষের গরু সে জোর করে নিয়ে গেছে।”
অপরজন বলল, “আমি কিছু নেইনি, ও মিথ্যে বলছে।”
মোড়ল বললো, “হাকিমের সামনে দাঁড়াও।”
দুইজন গিয়ে গাধার সামনে দাঁড়ালো। হঠাৎ গাধা যার দিকে তাকিয়ে হেঁচকি দিলো, তাকে দোষী ধরা হলো।
এরপর একের পর এক মামলা এলো—হাকিম গাধা চুপচাপ কখনো হেঁচকি দিচ্ছে, কখনো কেবল ঘাড় নিচু করছে—আর মোড়ল ঘোষণা করছে, “বিচার সম্পন্ন!”
কিন্তু গ্রামের এক চালাক ছেলে, নাম তার শামীম, ব্যাপারটা সহ্য করতে পারলো না। সে একদিন গোপনে গাধার নিচে একটা কাঠির মাথায় মরিচ বেঁধে রাখলো।
পরদিন নতুন মামলা এলো—দুই চোর ধরা পড়েছে, কে বেশি চুরি করেছে তা জানতে হবে। গাধা তো মরিচের জ্বালায় লাফিয়ে উঠলো আর জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
মোড়ল চমকে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শামীম চিৎকার করে বললো, “এই হলো তোমার বিচার? মরিচের ঝালেই তো হাকিম লাফায়!”
সবার চোখ খুলে গেলো। মোড়ল ধরতে পারলো, আর চালাকি চলবে না। গাধা বিচারক থেকে আবার মাঠের ঘাস খাওয়া প্রাণী হয়ে গেলো।
আর শামীম? সে হলো গ্রামের বুদ্ধিমান মানুষ, যে বোঝালো—বিচার বুদ্ধির কাজ, গাধামি দিয়ে নয়।
এই কিস্সা শেখায়—অন্ধ অনুসরণ নয়, সত্য যাচাই করাই আসল বিচার।
#sifat10
জুতার বাক্স আর রাজকুমারের জেদ
এক রাজ্যে ছিল এক অদ্ভুত রাজকুমার, নাম তার আদিল। রাজ্যের সব কিছু ছিল তার পছন্দমতো, কিন্তু তার ছিল এক অদ্ভুত জেদ—সে কারো তৈরি করা জুতা পায়ে দিত না। বলত, “আমার জন্য এমন জুতা চাই, যা কখনো ছিঁড়বে না, আর মাটিতে ধুলা লাগবে না।”
রাজা-রানী বিরক্ত হয়ে গেলেন। রাজ্যের সেরা মোচিরা আসতে লাগল, রাজকুমারের পা মেপে জুতা বানালো, কিন্তু সে একটাও পছন্দ করলো না। বলল, “এগুলো খুব সাধারণ!”
একদিন দরবারে হাজির হলো এক বয়স্ক মোচি, তার হাতে একটা পুরনো জুতার বাক্স। রাজকুমার কটমট করে তাকাল। মোচি নম্র গলায় বললো, “মহারাজ, জুতা তো সবাই বানায়। কিন্তু আপনি যদি সত্যি এমন জুতা চান, যা কখনো ছিঁড়বে না আর মাটি লাগবে না, তাহলে আপনাকে প্রথমে একটি কাজ করতে হবে।”
রাজকুমার অবাক, “কী কাজ?”
মোচি বললো, “আপনাকে পুরো রাজ্যে ঘুরে ঘুরে হাঁটতে হবে খালি পায়ে, যতক্ষণ না আপনি এমন একটি পথ খুঁজে পান যেখানে ধুলা নেই, কাঁকর নেই, আর হোঁচট নেই। তারপর আমি আপনার জন্য জুতা বানাবো।”
রাজকুমার জেদ ধরে বেরিয়ে পড়লো। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, জঙ্গল, পাহাড়—সে হাঁটতেই থাকলো। পায়ে কাঁটা ফুটলো, রক্ত পড়লো, পা ফুলে উঠলো। অবশেষে এক বৃদ্ধ তাকে বললো, “প্রভু, আপনি যদি চায়েন মাটিতে ধুলা না লাগুক, তাহলে আপনি পুরো রাজ্য নয়, শুধু আপনার পায়ের নিচে চামড়া বিছান।”
রাজকুমার বুঝে গেল—জুতা তো আসলে নিজের পায়ের সুরক্ষা, বাইরে বদলানো নয়, নিজের দৃষ্টিভঙ্গিই আসল।
সে ফিরে এসে মোচিকে বললো, “তুমি জিতে গেছো। এখন আমি জানি, জেদ নয়, বোধই বড়।”
মোচি হেসে সেই পুরনো বাক্স থেকে একজোড়া সাধারণ চামড়ার জুতা বের করলো—আর রাজকুমার আনন্দে পায়ে গলিয়ে নিল।
এই কিস্সা শেখায়—জগৎ বদলাতে চাইলে আগে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাও।
#sifat10