মুখোশ
তানিয়ার জীবনটা বাইরে থেকে দেখলে হিংসার মতো লাগে। ইনস্টাগ্রামে হাজার হাজার ফলোয়ার, প্রতিদিন নতুন ছবি, ঝলমলে ক্যাপশন—"Life is beautiful!", "Living the dream!"
বন্ধুদের মাঝে সে যেন স্টার। ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, ট্রিপ—সব জায়গায় ছবি, হাসি, উচ্ছ্বাস। কেউ দেখে না, সেই হাসির নিচে লুকিয়ে থাকা চাপা দীর্ঘশ্বাস।
বাসায় ফিরে প্রতিদিন তানিয়া আয়নার সামনে দাঁড়ায়। ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। মুখ থেকে মেকআপ তুলে নেয়, আর ধীরে ধীরে চোখ ভিজে ওঠে। মা-বাবার বিচ্ছেদ, ছোটবেলার মানসিক আঘাত, বিশ্বাসভঙ্গ—সব কিছু মিলিয়ে তানিয়া একাকিত্বে ডুবে যায়।
"তুই তো সারাক্ষণ হাসিস, দুঃখ তোদের কিসের?"—বন্ধুরা বলে।
সে চুপ করে থাকে। কারো সঙ্গে মনের কথা ভাগ করে না। মনে মনে ভাবে, “এই হাসিই তো আমার বাঁচার মুখোশ।”
একদিন ইনস্টাগ্রামে একটা মেসেজ আসে। এক ছোট্ট মেয়ে লিখেছে, “আপু, আপনি না থাকলে আমি হয়তো আজ বেঁচে থাকতাম না। আপনার ছবিগুলো দেখে মনে হয়, হয়তো আমিও একদিন সুন্দর জীবন পাব।”
তানিয়া প্রথমে অবাক হয়। তারপর মেয়েটার প্রোফাইলে গিয়ে দেখে, বিষণ্ণ চোখের একটা ছবি, ক্যাপশন—“আত্মহত্যা ভাবনায় ক্লান্ত…”
তানিয়ার বুকের ভেতর কেমন হিম হয়ে আসে। সে তখনই রিপ্লাই দেয়, “তুমি একা না। আমি আছি তোমার পাশে। কথা বলো, প্লিজ।”
এরপর তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা হতে থাকে। মেয়েটি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
তানিয়ার ইনবক্সে ধীরে ধীরে আরও অনেকের মেসেজ আসতে থাকে—“আপনার জন্য বাঁচতে ইচ্ছে করে”, “আপু, আপনি অনেক শক্তির উৎস।”
তানিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবার নিজেকে দেখে। মুখে আগের মতোই মেকআপ, হাসি, ফ্রেমে বাঁধা জীবন। কিন্তু আজ এই মুখোশটা আর কৃত্রিম নয়। আজ সে হাসে জানিয়ে—তার হাসি আর কারও বাঁচার কারণ হতে পারে।
মুখোশ না খুলেও হয়তো মানুষ সত্যিকারের হয়ে ওঠে—যখন সে অন্যের আঁধারে আলো হয়ে দাঁড়ায়।
#sifat10
MD Nafis islan
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?